শ্বাসরুদ্ধ শেষ বলের জয়ে সেমির আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ

 শ্বাসরুদ্ধ শেষ বলের জয়ে সেমির আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ

শুরু জোড়া আঘাতে ম্যাচে নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে দেয় তাসকিন

শ্বাসরুদ্ধ শেষ বলে জিম্বাবুয়েকে ৩ রানে হারিয়ে শেষ চারের আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ। ওপেনার নাজমুল হাসান শান্তর ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসের পর বল হাতে তাসকিন-মোস্তাফিজ- মোসাদ্দেকের তাণ্ডব। বিপরীতে ব্যাট হাতে শেন উইলিয়ামস প্রতিরোধ গড়ে তুললেও শেষ পর্যন্ত হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। শ্বাসরুদ্ধ শেষ বলে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।

রবিবার (৩০ অক্টোবর) বিসব্রেন টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে নাজমুল হাসান শান্তর ৭১ রানের সুবাদে ১৫০ রানের সংগ্রহ দাড় করায় বাংলাদেশ। জবাবে ৯ উইকেটে ১৪৭ রান করে জিম্বাবুয়ে। 

১৫১ রানে লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়েকে শুরুর ধাক্কাটা দিয়ে রেখেছিলেন তাসকিন আহমেদ। বিদায় করেছিলেন ওয়েসলি মাধেভেরে আর অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনকে। তবে জিম্বাবুয়ে দলে বাংলাদেশের অন্যতম বড় হুমকি সিকান্দার রাজা তখনো ক্রিজেই আসেননি। উইকেটে ছিলেন মিলটন শুম্বা আর শন উইলিয়ামস।

মুস্তাফিজকে আক্রমণে আনা হয়েছিল ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে আক্রমণে এসেই তিনি তুলে নেন শুম্বাকে। তার প্রথম বলটা ঠেকিয়েছিলেন শুম্বা। তবে দ্বিতীয় বলটায় তুলে মারতে চেয়েছিলেন মিড অফের ওপর দিয়ে, ব্যাটে বলে হলো না। ক্যাচ উঠে গেল, সাকিব আল হাসানের সেটা ধরতে কোনো বেগই পেতে হলো না।

এরপরই আসেন রাজা। তাকে প্রথম দুই বল অফ স্টাম্পের একটু বাইরে করেছিলেন মুস্তাফিজ, সে দুই বল ঠেকিয়েছিলেন রাজা। তবে ওভারের পঞ্চম বলটা লেন্থে তার গায়ের ওপর করেছিলেন মুস্তাফিজ। বলটা স্কয়ার লেগ দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন জিম্বাবুইয়ান অলরাউন্ডার, তবে হলো টপ এজ। সেটা গিয়ে জমা পড়ল আফিফ হোসেনের হাতে।

কিন্তু এরপরই শন উইলিয়ামস আর রেজিস চাকাভার ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় দলটি। তাতে শুরুর স্বস্তিটা উবে যেতে থাকে ধীরে ধীরে।  ইনিংসের ১২তম ওভারে চাকাভাকে বিদায়ে সেই স্বস্তিটা ফিরিয়ে আনেন তাসকিন। তার অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে নুরুল হাসানের হাতে জমা হয় চাকাভা। ৬৯ রানে দলটি খুইয়ে ফেলে ৫ উইকেট। এরপরও ম্যাচটি ঝুঁকতে থাকে জিম্বাবুয়ের দিকে। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের সফল হতে দেয়নি টাইগাররা। শেষ বলে ঝলকে জয় পায় সাকিব আল হাসানের বাংলাদেশ। 

বল হাতে বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন ৩টি, মোস্তাফিজ ও মোসাদ্দেক দুটি করে উইকেট নেন। 

এর আগে শেষ চারে যাওয়ার বাঁচা-মরার লড়াই নাজমুল হোসেন শান্ত’র ক্যারিয়ার সেরা ৭১ রানের সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫০ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। তবে আজও  জমেনি সেই সৌম্য-শান্তর ওপেনিং জুটি। দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার সৌম্যকে শূন্য রানেই বিদায় করে দেন ব্লেসিং মুজারাবানি।

এরপর আশা দেখিয়ে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ওয়ানডাউনে নামা লিটন দাসও মুজারাবানির শিকার ফিরেছেন সৌম্যর পিছুপিছু। ব্লেসিং মুজারাবানির বলে স্কুপ করার চেষ্টায় শর্ট থার্ড ম্যান চাতারায় ধরা পড়েন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। তিন বাউন্ডারিতে ১২ বলে ১৪ রানে থামলেন লিটন। 

এরপর ব্যাট হাতে নেমে শান্তকে নিয়ে হাল ধরেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ১৩তম ওভারের পঞ্চম বলে উইলিয়ামসের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন সাকিব। যাওয়ার আগে দুজনের গড়ে ৫৪ রানের জুটি। 
সাকির যাওয়ার পর আফিফ-শান্ত জুটি গড়েন। এর মাঝে ফিফটি তুলে নেন ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত। যা তার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ফিফটি।

ফিফটির পর ১৬তম ওভারে ১৭ রান নেন শান্ত। তবে পরের ওভারেই তাকে থামিয়ে দিলেন সিকান্দার রাজা। আজ বল হাতে কোনো কারিশমা দেখাতে না পারা রাজা নিলেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শান্তর উইকেটটি।  ১৭তম ওভারে ছক্কার চেষ্টায় আউট হয়ে যান শান্ত।

শান্ত ফিরে গেলে সেভাবে রানের চাকা সচল রাখতে পারেননি আফিফ হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেন। শান্তকে আউট করার ওভারে আসে মাত্র ৬ রান।  ১৮তম ওভারে আফিফ নিতে পেরেছেন মাত্র ৫ রান। ১৯ তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ক্যাচ ফেলে দিয়ে আফিককে ১৮ রানে জীবন দেন মুজারাবানি।

ওভারের ৫ম বলে কাঙ্ক্ষিত ছক্কা আসে আফিফের ব্যাট থেকে। সিকান্দার রাজার করা সে ওভারে ১২ রান তুলতে পারে আফিফ-মোসাদ্দেক।

শেষ ওভারে গাভারার দ্বিতীয় ডেলিভারিতে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।  ১০ বলে ৭ রান এসেছে তার কাছ থেকে। পরের বলেই রানআউট হয়ে ফিরেছেন নুরুল হাসান সোহান।  মাত্র ১ রান করতে পেরেছেন তিনি।

শেষ ২ বলের জন্য ব্যাট হাতে নামেন মিরাজের বদলে একাদশে সুযোগ পাওয়া ইয়াসির আলি রাব্বি।  তিনি এক রান নিয়ে আফিফকে স্ট্রাইক দেন। শেষ বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেছেন আফিফ।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *