মরণব্যাধি ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। ২০১৮ সালেই এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে সারাবিশ্ব ৯৬ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সারাবিশ্বে প্রতিবছর প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু হবে প্রাণঘাতী এ ব্যাধিতে।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রতি বছর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত এ ব্যাধি শনাক্ত ও নিরাময়ের নতুন নতুন পন্থা উদ্ভাবন করছেন। তেমনি এবার জার্মানির একদল বিজ্ঞানী ইঁদুরের শরীরে তামার তৈরি খুবই ক্ষুদ্র ধাতব কণা ব্যবহার করে এ মরণব্যাধি নিরাময়ে সফল হয়েছেন।
ক্যান্সার নিরাময়ে বিজ্ঞানীদের নতুন এই পদ্ধতির সফলতা নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে জার্মানির বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল অ্যাজিওয়ান্তে কেমির আন্তর্জাতিক সংস্করণে। প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, ইঁদুরের শরীরে এই ধাতব কণা প্রয়োগের পর তাদের শরীরে আর ক্যান্সারের জীবাণু ফিরে আসেনি।
ওই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইল জানায়, জার্মানির ওই বিজ্ঞানীরা কপার (তামা) এবং অক্সিজেনের সংমিশ্রণে কপার অক্সাইড তৈরি করেন। তারপর সেটিকে খুবই ক্ষুদ্র ধাতব কণার রূপ দেন, যা মানুষের মাথার চুল থেকে ১০০ গুণ পাতলা। এরপর বিজ্ঞানীরা ইনজেকশনের মাধ্যমে ক্যান্সার আক্রান্ত ইঁদুরের শরীরের টিউমারে সেই ধাতব কণা ঢুকিয়ে দেন। যার ইতিবাচক ফল পেয়েছেন তারা।
বিজ্ঞানীদের দাবি, ইঁদুরের শরীরে ধাতব কণা প্রয়োগের পর সেটি সফলভাবে ক্যান্সার নিরাময় করেছে। পরে গবেষণার জন্য ফের ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রাণীটির শরীরে ক্যান্সারের কোষ প্রয়োগ করা হলে, তাদের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্যান্সারের জীবণুবাহী ওই কোষটিকে সরাসরি ধ্বংস করে দেয়।
বিজ্ঞানীরা এখন নতুন এই চিকিৎসা পদ্ধতি মানব শরীরে প্রয়োগের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের আশা, নতুন এই চিকিৎসা পদ্ধতি বহুল ব্যবহৃত কেমোথেরাপির বিকল্প হতে পারে।
তবে নতুন এই চিকিৎসা পদ্ধতির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে গবেষক দলের অন্যতম দুই সদস্য জার্মানির কেইউ লিভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টেফান সোনেন এবং চিকিৎসক বেলা মানশিয়ান জানান, মানবদেহে এই ধাতব অক্সাইড অতিরিক্ত পরিমাণে প্রয়োগ করা হলে সেটি খুবই বিপজ্জনক হতে পারে। তবে নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত উপায়ে খুবই ক্ষুদ্র পরিমাণে মানব শরীরে এটি প্রয়োগ করা হলে সেটি উপকারী হতে পারে।
অধ্যাপক সোনেন বলেন, গবেষণায় ব্যবহৃত ইঁদুরের ফুসফুস ও অন্ত্রে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ক্যান্সারের কোষ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর কপার অক্সাইডের ধাতব কণা প্রয়োগ করে নিরাময় করা হয়। ওভারিয়ান ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসায়ও এই পদ্ধতি কাজ করতে পারে।