সীতাকুন্ডে দূর্গাপূজাকে ঘিরে শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি

সীতাকুন্ডে দূর্গাপূজাকে ঘিরে সনাতনী সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে ইতিমধ্যে আনন্দের জোয়ার বইতে শুরু করেছে। উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সীতাকুন্ডের বিভিন্ন  মণ্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজার ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রতিমা নির্মাণের কাজ। ৩ অক্টোবর দেবীর বোধনে শুরু শারদ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা । ৮ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব।
চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে শনিবার মহালয়ার ভোরে দেবী দুর্গাকে আবাহন জানানো হয়েছে পৃথিবীতে। তাই সর্বত্র এখন উৎসবের আমেজ।  সাজানো হচ্ছে পূজামন্ডপ।  প্রতিমার গায়ে পড়ছে শেষ মুহূর্তের রঙ তুলির আঁচড়। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন প্রতিমাশিল্পীরা।
শারদীয়  দূর্গাপূজা সামনে রেখে শেষ মুহুর্তে প্রতিমাশিল্পীদের ব্যস্ততা বেড়ে ঘেছে।
সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথধামে কপালের পানি ফেলার সময় নেই প্রতিমাশিল্পীরে। ৪ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গাপূজা। তার আগেই বুঝিয়ে দিতে হবে প্রতিমা।
প্রতি বছর পূজার চার-পাঁচ মাস আগে থেকেই পূজামন্ডপ ও প্রতিমালয়গুলোতে শুররু হয়ে যায় দূর্গার প্রতিমা বানানোর তোড়জোড়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্পিরা তৈরী করছে দূর্গাগুলো।  সীতাকুন্ড উপজেলায় ৫৯টি মন্ডপে শারদীয় দূর্গাপুজার আয়োজন চলছে। ব্যস্ত হয়ে পড়ছে প্রতিমা কারিগররা প্রতিমাকে বর্ণিল রূপে সাজাতে মৃৎশিল্পীরা।
প্রতিবছর আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে মা দূর্গা পৃথিবীতে দু:খ দূর্দশা, অশান্তি ও ক্লেশ দূর করতে দেবলোক থেকে মর্ত্যলোকে আসেন বলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস। দেবীকে বরণ করে নিতে তাই বিভিন্ন এলাকায় মহাসমারোহে পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
রবিবার সীতাকুন্ড পৌরসভার মন্দির সড়কে অবস্থিত চন্দ্রনাথধামের জগন্নাথ আশ্রমের পাশে মা প্রতিমালয়ে ঢুকতেই দেখা গেল প্রতিমার গায়ে মাটির প্রলেপ দিচ্ছেন শিল্পী  আদিত্য আচার্য। তাঁর সঙ্গে কাজ করছিলেন আরও কয়েকজন সহযোগী। এবছর তিনি বিশটি পূজামন্ডপের প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছেন। আদিত্য আচার্য্য জানান, দুইমাস আগে এবারের ২০টি পূজা মন্ডপের অর্ডার পেয়েছে। অন্যান্য বছর এ সময় আমার প্রতিমা বানানোর কাজ প্রায় শেষ হয়ে যেত। এবার সেটা হয়নি। তারপরও যথাসময়ে প্রতিমা বানানোর কাজ শেষ করার চেষ্ঠা করছি। আমাদের তৈরী দূর্গাগুলোতে আধুনিকতার ছোঁয়া আছে। তিনি আরও জানান, সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা মূল্যের প্রতিমা তৈরি করছেন এবার।  দিন-রাত কাজ করে পঞ্চমীর মধ্যে প্রতিমার কাজ শেষ করতে হবে তাঁকে।
মন্দির সড়কের শ্রী শ্রী শনি মন্দিরের সামনে অবস্থিত মৃৎশিল্পী শ্রী যুগল আর্চায্য জানান, দূর্গায় প্রতিমাগুলোতে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে।  পুজামন্ডপ কর্তৃপক্ষের ডিজাইন উপর ভিত্তি করে প্রতিমা ডিজাইন করা হয়।
মৃৎশিল্পীরা জানান, প্রথমে খড়ের বিরি দিয়ে তৈরী হয় কাঠামো তারপর সেই কাঠামোতে দেওয়া হয় মাটির প্রলেপ। এক্ষেত্রে এঁটেল মাটি ব্যবহার করেন শিল্পীরা। এরপর সেই মাটির মূর্তিতে আঁকা হয় চোখ, কান, নাক, চুলসহ হরেক রকমের নকশা। তারপর প্রতিমাকে যথাযথভাবে শুকানোর পর তাতে পড়ে রঙ-তুলির আঁচড়।
সীতাকুন্ডে ছোট বড় ৫টির মত কারখানা রয়েছে। এবার সবাই ওরিয়ন্টাল ধাঁচের দূর্গা করছেন। এখানে প্রতিমার সম্পূর্ণ সাজ-সজ্জা হয় মাটির তৈরীতে। শুধু রঙ করে বর্ণিল করা হয়। এতে বৈচিত্র বেশি। এ ধরনের প্রতিমা গড়তে খরচও কম পড়ে।
মৃৎশিল্পী কৃষ্ণ পাল বলেন, এবছর আমার কারখানায় বর্তমানে ১৬টি দুর্গা প্রতিমা বানানোর কাজ চলছে। ফরিপুর, যশোর, খুলনা থেকে কারিগর এনে প্রতিমা তৈরী করছি। এক একটি প্রতিমা তৈরীতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৫দিন। একজন কারিগরের বেতন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। আর এক একটি দূর্গা বিক্রি করতে হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *