সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণ জেলা প্রশাসনের ‘চাপে’ ক্ষতিপূরণ বাড়াল সীমা অক্সিজেন কারখানা

জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর কারখানা কর্তৃপক্ষ আজ সন্ধ্যায় নিহত ৭ জনের মধ্যে ৪ জনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বুঝিয়ে দেয়
জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর কারখানা কর্তৃপক্ষ আজ সন্ধ্যায় নিহত ৭ জনের মধ্যে ৪ জনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বুঝিয়ে দেয়

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের কারখানায় বিস্ফোরণে হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়িয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। শ্রম আইনে দুই লাখ টাকা করে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে দিচ্ছে কারখানাটি। একইভাবে অঙ্গহানি ও আহত হওয়া শ্রমিকদেরও বাড়তি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্ত নেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। বৈঠকের পর সন্ধ্যায় নিহত ৭ জনের মধ্যে ৪ জনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৈঠকে কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, শ্রম আইন অনুসারে নিহত প্রত্যেকের পরিবারের জন্য ২ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ তাঁরা শ্রম আদালতের মাধ্যমে পরিশোধ করেছে। কিন্তু এরপরও আমরা ক্ষতিপূরণ বাড়ানোর ব্যাপারে মালিকপক্ষকে প্রস্তাব দিয়েছি। তাঁরা আমাদের প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন। এ ছাড়া অঙ্গহানি হওয়া ২ জনকে ৫ লাখ টাকা এবং আহত ২২ জনকে ২ লাখ টাকা করে দিতে রাজি হয় মালিকপক্ষ।’

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারখানা কর্তৃপক্ষ নিহত ব্যক্তিদের প্রতিটি পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে দিতে চাইলেও জেলা প্রশাসনের চাপে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে। মালিকপক্ষ এরই মধ্যে হতাহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের নামে চেক আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের চারজনের পরিবারকে সন্ধ্যায় চেক বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকিদেরও পর্যায়ক্রমে চেক তুলে দেওয়া হবে।’

ইউএনও জানান, আহত ব্যক্তিরা সুস্থ হওয়া পর্যন্ত তাঁদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবে মালিকপক্ষ। পাশাপাশি আহত শ্রমিকদের বেতন–ভাতাও অব্যাহত থাকবে।

জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শ্রমিকদের জন্য বাড়তি ক্ষতিপূরণ আদায়কে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন শ্রমিক নেতারা। ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি) চট্টগ্রামের সভাপতি তপন দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিল্পকারখানায় দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে শ্রমিকদের যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়, তা যথাযথ নয়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিপূরণ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছি। জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে সীমা কারখানায় হতাহত ব্যক্তিদের জন্য বাড়তি ক্ষতিপূরণ আদায় করেছে—এটি প্রশংসাযোগ্য।’

গত শনিবার সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন কারখানায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কারখানার সাত শ্রমিক মারা যান। আহত হন আরও ২৪ জন। দুর্ঘটনার পর গত মঙ্গলবার নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য শ্রম আদালতে দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বিস্ফোরণে আহত ২১ জনকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *