সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ৬৫ দিন, মিলছে না সহায়তা সীতাকুণ্ডে জেলেপাড়ায় হাহাকার

পরিবারের নয় সদস্যদের মধ্যে উপার্জনক্ষম কেবল জগদীস জলদাস ও তার ছেলে। দু’জনেই সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু সাগরে মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞার ফলে তারা এখন বেকার। লকডাউনের কারণে বাইরে কোনো কাজও মিলছে না। ফলে নয় সদস্যের এই পরিবারে নেমে এসেছে হতাশা। জগদীসের বাড়ি সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী মির্জানগর জেলেপাড়ায়। জগদীসের মতো কয়েক হাজার জেলে পরিবার বর্তমানে চরম কষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের সাত হাজারের বেশি জেলে পরিবার রয়েছে। আর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া নিবন্ধিত জেলে হলেন চার হাজার ৮০৫ জন।

গত ২০ মে থেকে সমুদ্র উপকূলে মাছ ধরা বন্ধ আছে। এ নিষেধাজ্ঞা চলবে ৬৫ দিন। সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার ফলে উপজেলার নয় ইউনিয়নের সাগর উপকূলে কয়েক হাজার জেলে পরিবার চরম সংকটে পড়েছে। এতে উপজেলার ২০টি হাটবাজারে সামুদ্রিক মাছের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বেড়ে গেছে মুরগি, মাংস, মিঠা পানির মাছ, ডিম ও তরকারির দাম।

আয়-রোজগার বন্ধ থাকায় জেলেপল্লিতে এখন হাহাকার অবস্থা। অসহায় ও বেকার জেলেদের পুনর্বাসনে এ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কোনো ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় ৪ হাজার ৮০৫ জন জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্তে বঙ্গোপসাগরের মৎস্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মাছ ধরা বন্ধের কারণে জেলেরা কষ্টে আছেন, তাদের সহায়তা দরকার। বেকার জেলেদের পুনর্বাসনের জন্য প্রতি পরিবারে দুই দফায় ৮৫ কেজি চাল চেয়ে ইতোমধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে।’

সীতাকুণ্ডের অন্যতম পাইকারি মাছের বাজার (মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র) মহন্তেরহাট। সেখানে দেখা গেছে, সাগরের কোনো মাছ নেই। সাগর উপকূলে কুমিরা, ভাটিয়ারী, ইমামনগর, ছলিমপুরে নোঙর করে আছে শত শত মাছ ধরার ইঞ্জিনচালিত নৌকা। নৌকাগুলোতে যারা দৈনিক মজুর হিসেবে কাজ করতেন তারাও কয়েক দিন আগে বাড়িতে চলে গেছেন। প্রতিটি নৌকাতে জেলে থাকেন ৪-৫ জন করে। জেলে হারাধন জলদাস (৪৪) বলেন, টানা ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধের ঘটনা কয়েক বছর আগে থেকে চলে আসছে। আগে বিভিন্ন এনজিও সহযোগিতা করলেও এবার কোনো বেসরকারি সংস্থা সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে না। জেলে পরিবারগুলোর অভাব-অনটনে দিন কাটছে।

উপজেলা মৎস্য ক্ষেত্র সহকারী রুহুল আমিন বলেন, ‘সাগরে এখন বড় প্রজাতির মাছ রক্ষা ও অপরিকল্পিতভাবে মাছ আহরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন মাছের প্রজনন মৌসুম চলছে। তাই সরকার টানা ৬৫ দিন (২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ) মাছ ধরা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, মাছ ধরা বন্ধের সময় কোনো জেলে যেন সাগরে মাছ ধরতে নামতে না পারেন, তাই কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী তৎপর আছে।

এদিকে সাগরে মাছ ধরা বন্ধের কারণে সামুদ্রিক মাছ নেই সীতাকুণ্ডে ২০ বাজারে। বাজারে বিক্রি হচ্ছে খামার ও পুকুরে উৎপাদিত তেলাপিয়া, পাঙ্গাশ, রুই, কাতলা, বাটা, ট্যাংরা, চিংড়ি মাছ। দামও আকাশছোঁয়া। সামুদ্রিক মাছ লইট্যা, রূপচাঁন্দা, কোরাল, ইলিশ, পোয়া মাছ নেই কোথাও।

ভাটিয়ারী বাজারে মাছ কিনতে আসা শহরের ব্যবসায়ী জাহেদুল আনোয়ার (৪৫) বলেন, ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধের প্রভাব পড়েছে হাটবাজারে। এখন ১২০ টাকার তেলাপিয়া কিনতে হচ্ছে ২০০ টাকায়, ৪০০ টাকার ছোট চিংড়ি ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পোলট্রি মুরগির দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা। দেশি মুরগির কেজি এখন ৫০০ টাকা। আগামী দিনে মাছের দাম আরও বাড়বে। তখন মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যাবে। শাকসবজি-তরিতরকারির দামও বেড়েছে কেজিতে ১০-৩০ টাকা।

স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী আবদুল জলিল বলেন, ২০ মে থেকে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ আছে। এ কারণে বাজারে মাছের সংকট চলছে। এখন বাজারে সামুদ্রিক মাছ নেই বললে চলে। তবে কিছু বাজারে আগের মজুদ করা সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। কয়েক দিনের মধ্যে মজুদ শেষ হলে সংকট আরও বাড়বে।

সূত্রঃ- দৈনিক সমকাল


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *