দুই বছরপর করোনার ধকল কাটিয়ে এলো খুশির ঈদ।

ঈদ মোবারক! ঈদ মোবারক! ঈদ মোবারক! 

করোনার কারণে টানা দুই বছর মানুষের মাঝে ঈদের আনন্দের চেয়ে করোনার শঙ্কায় ছিল বেশি। এবার  সেই শঙ্কা কাটিয়ে বাঙালি মুসলমানদের ঘরে ঘরে ঈদের আমেজটা একটু বেশিই। দীর্ঘ এক মাস সংযম ও সাধনার পর ঘরে ঘরে, জনে জনে আনন্দ-খুশির বার্তা বয়ে নিয়ে এসেছে এই ঈদ। 

ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। ঈদ মানেই ধনী গরিব ভেদাভেদ ভুলে এক হওয়া। শ্রেণিবৈষম্যের মূলোৎপাটন। বুকে বুক রেখে কোলাকুলি। হাসিমুখে ঈদের শুভেচ্ছা, তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা। এ আনন্দ যেন আল্লাহর রহমত ও ক্ষমাপ্রাপ্তির। জাহান্নাম থেকে মুক্তির। এ আনন্দ সিয়াম-কিয়ামের শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতার। এ আনন্দে নেই কোনো অশ্লীলতা ও পাপ-পঙ্কিলতা।

মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার শেষে পশ্চিমাকাশে শাওয়াল মাসের বাঁকা চাঁদ উদিত হওয়ার মধ্য দিয়ে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে ঈদুল ফিতরের আবাহন, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানি তাগিদ…।’

ঈদ-উল-ফিতর নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত কালজয়ী গান এটি। বাঙালি মুসলমানের ঈদ উৎসবের আবশ্যকীয় অংশ। কবির শিষ্য শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহমদ এর অনুরোধে ১৯৩১ সালে কবি নজরুল এই গান রচনা ও সুরারোপ করেন। 

একটি গান কতটা মধুর হলে, কতোটা বাস্তব হলে সব বাস্তবতাকে ডিঙিয়ে এক নাগাড়ে চলতে পারে! কতোটা হৃদয়স্পর্শী হলে সব পবিত্র মনে দিতে পারে দোলা! সেখানে কতোটা আবেগ থাকলে টানা ৮৪ টি বছর ধরে মুসলমানের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আজহায় মানুষের মুখে মুখে বাজতে থাকে ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’।

ঈদের দিনটি আমাদের জন্য আনন্দের দিন। মনের সব কালিমা দূর করে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে, মান-অভিমান বিসর্জন দিয়ে সবাই হাতে হাত মেলানো, বুকে বুক মেলানো, গলায় গলা মেলানো অর্থাৎ সবার দেহ-মন এক হওয়ার আনন্দ হলো ঈদের আনন্দ। নিজের মনের হিংসা, ঘৃণা, লোভ, অহঙ্কার, অহমিকা, আত্মম্ভরিতা, আত্মশ্লাঘা, রাগ, ক্রোধ, বিদ্বেষসহ যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করার আনন্দ; সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির আনন্দ। রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো যখন সে ইফতার করে; দ্বিতীয়টি হলো যখন সে তার মাবুদ আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে। 

ঈদের দিনে খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, মিসওয়াক করা, মহল্লার (এলাকার) মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ পড়া, গোসল করা, সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা, আতর ব্যবহার করা, নামাজের আগে সদাকাতুল ফিতর আদায় করা, ঈদুল ফিতর নামাজের আগে কিছু মিষ্টান্ন খাওয়া, তিন, পাঁচ বা বেজোড়সংখ্যক খেজুর বা খুরমা খাওয়া, সকাল সকাল ঈদের নামাজ পড়ার জন্য যাওয়া, ঈদের নামাজ ঈদগাহে গিয়ে পড়া সম্ভব না হলে মহল্লার মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়া, আস্তে আস্তে নিম্নলিখিত দোয়া পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়া- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। 

ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া, এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা, শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে খুশি প্রকাশ করা প্রভৃতি ঈদের সুন্নত। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর সুসংবাদের অধিকারী করুন। প্রকৃত খুশি ও উভয় জগতের কল্যাণ আমাদের নসিব করুন।

প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী নির্দিষ্ট দিনে আনন্দ করে থাকে। সাধারণত দেখা যায় যারা ধনী, তারা আনন্দ-ফুর্তি করে, গরিব-অসহায়রা তা থেকে বঞ্চিত থাকে; কিন্তু ইসলামে ঈদের খুশি শুধু ধনীরা পাবে তা নয়; বরং গরিব-অসহায়রাও ঈদের খুশি ভোগ করবে। তাই ঈদুল ফিতরের সময় ধনীদের ওপর সাদাকাতুল ফিতর অত্যাবশ্যক করা হয়েছে।

মুসলমানদের সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ ঈদুল ফিতর। রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস মাহে রমজান। যারা মাহে রমজানকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পেরেছেন, তাদের জন্য ঈদ খুশির বার্তা নিয়ে আসে। রমজানের সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে না পারা নিতান্ত হতভাগা হওয়ার আলামত। অন্য দিকে যারা অবারিত রহমতের মাসটিকে কাজে লাগাতে সক্ষম হন, তাদের নিয়ে গর্ব করেন স্বয়ং আল্লাহ রব্বুল আলামিন।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজানের শেষে মুমিন বান্দারা যখন তাকবির পাঠ করতে করতে ঈদগাহের উদ্দেশে রওয়ানা হন, আল্লাহ তায়ালা তখন ফেরেশতাদের বলেন, যে বান্দা তার কর্তব্য সম্পন্ন করে, তার প্রতিদান কী হওয়া উচিত?

ফেরেশতারা বলেন, তার প্রতিদার পূর্ণ মাত্রায় দেয়া উচিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার বান্দারা তাদের ওপর আরোপিত কর্তব্য পালন করে এখন আমার মহিমা ঘোষণা করতে করতে বের হয়েছে। আমি আমার মর্যাদা ও প্রতিপত্তির শপথ করে বলছি, তাদের দুয়া অবশ্যই কবুল করব। তারপর আল্লাহ ঘোষণা করেন, তোমরা ফিরে যাও। আমি তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের পাপরাশিকে সওয়াবে পরিণত করলাম।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *