“সচিবালয়ের আগুন: বাংলাদেশের জন্য আবারো জেগে ওঠার সংকেত”

এড মোহাম্মদ সরোয়ার হোসাইন লাভলু,
অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর, জেলা ও দায়রা জজ আদালত,চট্টগ্রাম।

২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ সালের গভীর রাতে বাংলাদেশ সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ঘটনায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের অমূল্য নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এই অগ্নিকাণ্ড শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং এটি জাতির জন্য গভীর সংকেত বহন করে।

অগ্নিকাণ্ডের পেছনের প্রশ্ন

এত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এমন অগ্নিকাণ্ড কীভাবে ঘটল? এটি দুর্ঘটনা, নাকি দুর্নীতির প্রমাণ ধ্বংসের জন্য পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র? সদ্য বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষাপটে এই অগ্নিকাণ্ড নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, দুর্নীতির অনুসন্ধান ও বিচার এড়ানোর জন্যই এই আগুন লাগানো হতে পারে।

শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতির ছায়া

শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে বহু মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম, ঘুষ গ্রহণ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে আলোচিত হয়েছে। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত কার্যক্রম এবং বিচার বিভাগীয় অনুসন্ধান এই অভিযোগগুলোকে আরও জোরালো করেছে। সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডে ঠিক সেইসব মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র পুড়ে গেছে, যেগুলো দুর্নীতির জন্য সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল।

জাতীয় জাগরণের প্রয়োজন

সচিবালয়ের এই অগ্নিকাণ্ড শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, এটি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও জবাবদিহিতার বড় প্রশ্ন তুলে ধরেছে। দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনিক কাঠামো ও জবাবদিহিতার অভাব এই ধরনের ঘটনার জন্ম দেয়। এ মুহূর্তে জাতির জেগে ওঠা প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা।

প্রতিকার ও সুপারিশ

১. অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আধুনিকায়ন: সচিবালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে।
২. ডিজিটালাইজেশন: সব গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ডিজিটাল আর্কাইভে সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
৩. দুর্নীতির তদন্ত ও শাস্তি নিশ্চিত করা: উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের চিহ্নিত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
৪. জবাবদিহিতার সংস্কৃতি: প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামো শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

সচিবালয়ের অগ্নিকাণ্ড আমাদের জন্য একটি বড় শিক্ষা। এটি শুধু প্রশাসনিক দুর্বলতার ইঙ্গিত নয়, বরং আমাদের জাতীয় মানসিকতারও প্রতিফলন। এই ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সবাইকে একত্রিত হতে হবে।

আগুনের ধ্বংসাবশেষ থেকে জাতির জেগে ওঠার সংকেতই আজকের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। জাতীয় নেতৃত্ব, প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ একত্রে কাজ করলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব। সচিবালয়ের আগুন যেন আমাদের জন্য একটি জাগরণের সূচনা করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top