যেভাবে আলসেমি দূর করে মনোযোগী হবেন

সুন্দর জীবনযাপনের জন্য সকলেরই দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। ঢিলেমি বা অলসতা শরীর ও মন উভয়ের জন্যই খারাপ। কারণ এটি মানুষকে মানসিক চাপে ফেলে দেয়, কাজে বিলম্ব ঘটায়।

আলসেমি দূর করে মনোযোগী হওয়ার উপায় নিয়ে বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা ৮টি পরামর্শ দেন:

১. মোটিভেশনের জন্য শুধু ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর নয়

ক্রীড়া মনোবিদ ইয়ান টেইলরের মতে, মানুষ অনেক সময় মনে করে ইচ্ছাশক্তিই সবকিছু। কিন্তু এটি সঠিক নয় বলেই মনে করেন তিনি। তাই শুধু ইচ্ছা শক্তির ওপর নির্ভর না করে তিনি কাজের খারাপ দিকটিকে উপেক্ষা করাই শ্রেয় বলে মনে করেন। বরং সেটিকে অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে হবে যা হবে লক্ষ্য অর্জনের একটি অংশ।

২. ফেলে রাখা কাজে ইতিবাচক কি আছে দেখুন

শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুসচিয়া সিরোইস বলছেন, আলস্য বা সময় ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা সমস্যা নয়। আপনি যদি উদ্বিগ্ন হন এই ভেবে যে আপনি ব্যর্থ হবেন তাহলে কাজ ফেলে রাখার যুক্তি তৈরি হবে। এটা একটা বাজে চক্র তৈরি করতে পারে। বিলম্ব করার কারণে কাজ করার সময় কমে যাচ্ছে, যা ব্যর্থতার ঝুঁকি বাড়ায় এবং আপনাকে উদ্বিগ্ন করে তোলে।

এসব এড়াতে কাজের ইতিবাচক দিকটি দেখার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, হয়তো কিছু শিখবেন বা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি আনন্দ পাবেন।

৩. অগ্রিম পরিকল্পনা

আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আলসেমি করার একটি প্রবণতা তৈরি হচ্ছে আপনার মধ্যে তাহলে মানসিকভাবে একটি কৌশল নিন। কেউ যদি আপনাকে কোনো সপ্তাহের শেষে কোনো বৈঠকের কথা বলে আপনি বরং বলুন বৈঠক আজকেই সেরে ফেলার।

আমেরিকান মনোবিদ পিটার গলউইটজার এ কৌশলের ওপর ৯৪টি সমীক্ষা পর্যালোচনা করেন। তার মতে যারা কৌশলটি অনুসরণ করে তারা অন্যদের চেয়ে লক্ষ্য অর্জনে ২/৩ গুণ বেশি দৃঢ় থাকে।

৪. চাপ কমান

যতটা সম্ভব সহজ করুন। সকালে দৌঁড়ানোর পরিকল্পনা থাকলে আগেই পোশাক ঠিক করে রাখুন। কাজের পরিকল্পনা আগের রাতেই টেবিলে চূড়ান্ত করে রাখুন। তাহলে প্রথমেই আপনি ধারণা পেয়ে যাবেন যে, কি দিয়ে কাজ শুরু করবেন। আর বাধাগুলো, যেমন স্ক্রিনে এলার্ট সরিয়ে ফেলুন। ফোন মিউট করে রাখুন ও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে লগ অফ করুন।

৫. নিজেকে পুরস্কৃত করুন

কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাইটলিন য়ুলির নতুন এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, তাৎক্ষণিক পুরষ্কার কঠোর পরিশ্রম করতে উদ্বুদ্ধ করে। জটিল কাজ ফেলে রাখা থেকেই আলসেমি শুরু হয়- তাই এর পাল্টা ব্যবস্থা হতে পারে যথাসময়ে কাজের পুরষ্কার।

পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা বলছে, জিমে ব্যায়াম করার সময় অডিও বুকস দিলে তা ভালো কাজ করে। অর্থাৎ সেই তাৎক্ষণিক পুরষ্কার।সুতরাং দেখুন আপনার ক্ষেত্রে কোনটি কাজ করে।

৬. ভবিষ্যতের জন্য অধিকতর বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে উৎসাহিত করুন

অনেকেই আমরা বিশ্বাস করি ভবিষ্যতে আমরা অনেক সময় পাবো। আমরা ভাবি আমরা সামনে আরও গোছানো, আরও অ্যাকটিভ হবো কিংবা এমন জীবনযাপন করবো সেখানে কোনো ভুল ত্রুটি থাকবেনা। এটা অবশ্যই হবেনা। এসব কারণেই অনেক সময় আমরা বুঝিনা কাজ শেষ করতে কত সময় লাগবে। এটাকেই বলে পরিকল্পনাগত ভুল।

৭. নিজের প্রতি সদয় হোন

হাতে থাকা কাজ ঝুলিয়ে রাখলে অনেক সময় নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। যেসব শিক্ষার্থী পরীক্ষার আগে পড়া ঝালিয়ে নিতে পারেনি তাদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা আলসেমি জনিত কারণে নিজেকে ক্ষমা করে দেয় তারা পরবর্তী সময়ে ভালো করে।

সিরোইস বলছেন, আমরা নিজের ওপর মাঝে মধ্যে যতটা নির্দয় হই, বন্ধুদের ওপরও ততটা হতে পারিনা। ‘তাই আমাদের নিজেদের প্রতিও কিছুটা সহমর্মিতা দেখানো উচিত’।

৮. নিজের সম্পর্কে কথা বলুন

আপনি যে ভাষা ব্যবহার করেন সেটিও একটি ভিন্নতা তৈরি করতে পারে। ইয়ান টেইলর বলছেন, এটা কাজ করে কারণ এটা আপনার ও আপনার আচরণের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top