ডেস্ক:
এ বছরের জুলাই মাসের শেষের দিকে অনুষ্ঠেয় হজ্বে অংশগ্রহণ ও পবিত্র কাবা শরীফ প্রদক্ষিণে অংশ নেওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছেন বিশ্বের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমান। যদিও সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত ও করোনা পরিস্থিতির ওপরই নির্ভর করবে এবারের হজ্ব হবে কি হবে না।
করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর পবিত্র হজ্ব পালন বাতিল হতে পারে এমন জল্পনা-কল্পনার মধ্যে মুসলমানদের হজের জন্য তাঁদের পরিকল্পনা বিলম্বিত করার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব সরকার।
করোনা পরিস্থিতিতে হজ্ব হবে কি হবে না, এ বিষয়ে সৌদি সরকারের কাছ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল্লাহ। বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ খবর জানিয়েছে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেখুন সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস। করোনা পরিস্থিতি এবং সৌদি সরকার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে এবার হজ্ব হবে কি হবে না।’
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ বছর সৌদি আরবে হজ্ব পালন করতে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন যেতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২০ হাজার জন।
সূত্রটি জানায়, হজ্ব নিবন্ধনের সময় কয়েক দফা বাড়ানোর পর শেষ দফায় সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে মাত্র ৬৪ হাজার ৫৯৪ জন নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিন হাজার ৪৫৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬১ হাজার ৫৯৪ জন।
এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হজ্ব পালনে সরকার পরিচালিত সর্বনিম্ন ব্যয় তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে প্যাকেজ-৩ এর আওতায় হজ প্যাকেজ-২০২০ এর খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিপরিষদ।
হজ্বে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতেও হজ্বে হজযাত্রী পাঠাতে আমরা নিবন্ধন করার কাজ করে যাচ্ছি যাতে যদি সৌদি সরকার হজ্বের ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হজযাত্রী পাঠাতে পারি।’
তবে এবার করোনা পরিস্থিতিতে সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত এখনো না পাওয়ার কারণে হজ্ব যাত্রী নিবন্ধিত সংখ্যা অনেক কম হয়েছে।
যদি এ বছর নিবন্ধিত হজ্ব যাত্রীরা হজ্বে না যেতে পারেন, তাহলে কী করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ইতোমধ্যে হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করে রেখেছেন, তাঁরা যদি সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে হজে না যেতে পারেন, তাহলে আগামী বছর তাঁরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হজ্বে যেতে পারবেন।’
হজ্বের জন্য যাঁরা টাকা জমা দিয়েছেন তাঁদের আশ্বস্ত করে অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না। এবার হজে না যেতে পারলে আগামীবার যাবেন। আগামীবার না যেতে চাইলে টাকা ফেরত পাবেন। এ বিষয়ে আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি।’
চলতি বছর হজ্বে যেতে আগ্রহীদের নিবন্ধণ কার্যক্রম ৩০ এপ্রিল শেষ হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব নুরুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো হবে না।
এখন সারা বিশ্বের অবস্থা সবার জানা এবং এ পরিস্থিতিতে হজ্ব নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে জানিয়ে নুরুল ইসলাম বলেন, সৌদি সরকার হজ্বের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখে তারপর যা করার করা হবে।
নুরুল ইসলাম আরো বলেন, হজ্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত যাই আসুক, যাঁরা হজ্বের জন্য টাকা জমা দিয়েছেন, তাঁরা প্রতারিত হবেন না।
হজ্ব এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘হজ্বের নিবন্ধন শেষ করে আমরা প্রস্তুত আছি।’ এবারের হজ্ব হবে কি হবে না বলাটা খুবই কঠিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সৌদি সরকারে সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে, এ বছর হজ্ব হবে কি হবে না। আমরা তাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এ বছর আগামী ৩০ জুলাই (৯ জিলহজ) হজ্ব হওয়ার কথা রয়েছে।
১৯৩২ সালে সৌদি সরকার গঠনের পর প্রতিবছর হজ্ব পালন করে আসছেন বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
মহামারি রোগ ও হজ্ব বাতিলের ঘটনা:
বর্তমানের মতোই প্লেগ ও কলেরা রোগের মহামারি, অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ইতিহাসে হজ্ব বাতিলের ঘটনা আগেও ঘটেছে।
বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, প্লেগ ও কলেরা রোগের মহামারির কারণে প্রথমবারের মতো ৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে এবং ফাতিমিদ সাম্রাজ্যের আমলে ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দে খরা ও দুর্ভিক্ষের ফলে পায়ে হেঁটে হজ্ব পালন বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে, উনিশ শতক জুড়ে একাধিক বার চলাকালীন সময়ে কলেরার প্রকোপে হাজার হাজার হজ্ব যাত্রী মারা গিয়েছিল।
১৮৫৮ সালে পবিত্র শহর মক্কা ও মদিনায় কলেরা মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মিশরীয়কে লোহিত সাগরের সীমান্তে পালিয়ে আসতে হয়েছিল। তাদেরকে দেশে ঢুকতে দেয়ার আগে কোয়ারেন্টাইনে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।
উনিশ শতকের বেশিরভাগ সময়ে এবং ২০ শতকের শুরুতে কলেরা একটি বহুবছরব্যাপী হুমকিতে পরিণত হয়েছিল এবং বেশ কয়েক বছর হজ্ব বাতিলে বাধ্য করেছিল।
প্লেগের কারণেও ইতিহাসে হজ বাতিলের ঘটনা ঘটেছে। ১৮৩১ সালে ভারতে কলেরা মহামারি হিসেবে দেখা দিলে হজ্ব পালনে গিয়ে যাত্রাপথে হাজার হাজার হজযাত্রীর মৃত্যু হয়।
এমন বাস্তবতায় ঘন ঘন মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে প্রায়শই হজ্ব বাতিলে ঘটনা ঘটে।
সূত্র : শিকড় সংবাদ