হাত দিয়ে দৈনিক মুখ ( T-জোন) ছুঁচ্ছি ২৪০ বার! রক্ষা করুক মাস্ক

আদ্বান অর্চিশ, সীতাকুন্ড বার্তা;

শ্বাসযন্ত্রজনিত প্রায় ২৫ শতাংশ রোগই মুখে হাত দেওয়ার কারণে ছড়ায়। একাধিক সমীক্ষা ইতিমধ্যেই তা দেখিয়েছে। সমীক্ষা আরও দেখিয়েছে, ঘণ্টায় গড়ে ১৫-২৪ বার কোনও ব্যক্তি হাত দিয়ে নিজের মুখ স্পর্শ করেন। অর্থাৎ, ঘুমের সময় যদি ৮ ঘণ্টা ধরা হয়, তা হলে জেগে থাকা অবস্থায় কোনও ব্যক্তি দিনে ২৪০-৩৮৪ বার হাত দিয়ে মুখ স্পর্শ করেন অজান্তেই। সার্স-কোভ-২ সংক্রমণের উদ্বেগজনক হারও সেই অভ্যাস বদলায়নি বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। ঘটনাক্রমে যা বহুগুণে বাড়িয়ে দিচ্ছে সংক্রমণের আশঙ্কা।

কারণ, একাধিক গবেষণার উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞদের অনেকের বক্তব্য, মুখে হাত দেওয়ার এই প্রবণতার সূত্রপাত গর্ভে থাকতেই শুরু হয়। ফলে সেই অভ্যাস ভুলে যাওয়াটা (আনলার্ন) সহজ কথা নয়। চোখ-নাক-মুখ, এই তিনটি বিন্দু একত্রে ইংরেজি ‘টি’ অক্ষরের মতো। তাই একে ‘টি-জ়োন’ বা ‘টাচ-জ়োন’ও বলা হয়। সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের প্রবেশপথই হল ওই টি জ়োন। ফলে ওই অংশ মাস্কে ঢাকা থাকলে ভাইরাসের প্রবেশের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।

স্বাস্থ্য পরিষেবায় উন্নতিতে গঠিত ‘এশিয়া প্যাসিফিক ফোরাম’-এর ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি’-র সদস্য তথা দিল্লির ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স’-এর অধ্যাপক-নিউরোলজিস্ট কামেশ্বর প্রসাদ জানাচ্ছেন, উন্মুক্ত হওয়ার কারণে টি-জ়োন অত্যন্ত স্পর্শকাতর এলাকা। টি-জ়োন-এর ত্বকের উপরিভাগে ‘রিসেপটর’-এ কোনও রকম উত্তেজনা তৈরি হলেই প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় (রিফ্লেক্স) হাত মুখে চলে যায়,—সে ঘাম পড়ে হোক বা বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা বা মাথার চুল-খুসকি মুখে পড়ে। তাঁর কথায়, ‘‘এই ধরনের ঘটনা এড়ানো যায় না। তাই হাত যাতে টি-জ়োনে না যায়, সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।’’ সেই জন্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় অন্তর টি-জ়োনে মনোযোগ স্থাপন করতে হবে। হু-র এক গবেষকের কথায়, ‘‘টি-জ়োনের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়াই হল সংশ্লিষ্ট অংশে হাত যাওয়া ঠেকানোর প্রথম ধাপ।’’

হাত মুখে চলে যাওয়া আটকাতে কোনও আচরণের বিপরীত আচরণের উপরে গুরুত্ব দিতে হবে বলে জানাচ্ছেন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট প্রশান্তকুমার রায়। তিনি জানাচ্ছেন, ছটফটে বাচ্চাদের শান্ত করার জন্য যেমন আঁকতে বা অন্য কাজে বসানো হয়। তেমনই টি-জ়োনে স্পর্শ আটকাতে হাতকে ব্যস্ত রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে হাত মুঠো করে কয়েক বার খোলা-বন্ধ বা কাঁধের নীচের অংশে (যে হেতু মুখ স্পর্শ করতে হাত অজান্তেই কাঁধের উপরিভাগে চলে যায়) হাত রেখে কনুই থেকে হাত ভাঁজ করে আবার তা টানটান করতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘যত দিন না টি-জ়োনে হাত যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তত দিন মাস্ক পরাটা জরুরি।’’

হাত দিয়ে মুখ স্পর্শ করা নিয়ে সতর্ক করতে ইতিমধ্যেই ‘ডুনটটাচইয়োরফেস.কম’ নামে একটি ওয়েববেসড-অ্যাপও চালু হয়েছে। ওয়েবক্যামের মাধ্যমে যে অ্যাপ সংশ্লিষ্ট ইউজ়ারকে সতর্ক করে দেবে ঠিক কত বার তিনি হাত দিয়ে মুখ স্পর্শ করছেন।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *