মিরসরাইয়ে সাগরে ডুবা ড্রেজারের বালিতে চাপা পড়েছে ৮ শ্রমিকের মরদেহ

 মিরসরাইয়ে সাগরে ডুবা ড্রেজারের বালিতে চাপা পড়েছে ৮ শ্রমিকের মরদেহ

মিরসরাইয়ের ইকোনোমিক জোন সংলগ্ন এলাকায় সাগরে বালু উত্তোলনের ড্রেজারটি (সৈকত-২) ডুবে যায়।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উত্তাল সাগরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের জন্য বালি উত্তোলন কাজে নিয়োজিত থাকা ড্রেজার ডুবে মিরসরাইয়ে নিখোঁজ ৮ শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে উদ্ধারকারীরা। 

মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে উদ্ধারকারী দল নিশ্চিত হয় ড্রেজারে থাকা নিখোঁজ ৮ শ্রমিক ড্রেজারের ভেতরই মারা গিয়ে বালিচাপা পড়ে আছেন। এখন পানির স্রোত ডিঙিয়ে তাদের ড্রেজারের হেজে বালির ভেতর থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। 

এরআগে সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে সাহেরখালি ইউনিয়নের শিল্প নগরের বসুন্ধরা জোনের বেড়িবাঁধ থেকে এক হাজার ফুট দূরত্বে সাগরের মাঝে রাখা বালু উত্তোলনের ড্রেজারটি ডুবে যায়। মঙ্গলবার বেলা ১১টার থেকে প্রবল স্রোত ডিঙ্গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। 

উদ্ধার তৎপরতায় নেতৃত্ব দেওয়া মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুর রহমান ঘটনাস্থল থেকে সিভয়েসকে বলেন, ‘রাতের কোন সময়ে এ ড্রেজার ডুবির ঘটনা ঘটেছে সেটা নিশ্চিত নয়। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন মঙ্গলবার সকালে গিয়ে দেখে এসেছেন ড্রেজারের ভেতরই নিখোঁজ ৮ শ্রমিক বালি চাপা পড়ে আছে। প্রবল স্রোতের কারণে উদ্ধার তৎপরতায় বিঘ্ন হচ্ছে। ড্রেজারে থাকা বেঁচে ফেরা এক শ্রমিকের নাম আব্দুস সালাম। তিনি গতকাল সন্ধ্যার দিকে ফিরে আসেন। ওই শ্রমিক জানিয়েছেন, তার সাথে থাকা অপর ৮ শ্রমিক ড্রেজারের ভেতর হেজেই ছিল তখন। সেখানকার হেজে থাকার কারণে ডুবে যাওয়ায় তারা সেখানেই আটকা পড়ে। এসব কারণে ধারণা করছি তারা ড্রেজারের হেজেই মৃত অবস্থায় আটকে আছে। বালি চাপা পড়ায় মরদেহ উদ্ধারে বিঘ্ন হচ্ছে।’ 

একই কথা জানিয়ে উদ্ধার অভিযানে থাকা ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের উপ সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ হারুন পাশা ঘটনাস্থল থেকে সিভয়েসকে বলেন, ‘ঘটনা রাতে ঘটলেও আমাদের মঙ্গলবার বেলা ১১টার পর জানানো হয়। আমরা ১২টার পর থেকে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করি। বর্তমানে দুজন ডুবুরিসহ আমাদের টিম কাজ করছে। সাগরে পানির স্রোত প্রবল হওয়ায় উদ্ধার তৎপরতায় বেগ পোহাতে হচ্ছে।’

নিখোঁজদের মৃতদেহ পাওয়া গেছে কিনা— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে পানির উপরে না আনা পর্যন্ত আমি তা অফিসিয়ালি বলতে পারব না। তবে ড্রেজারের ভেতর যে লাশ নেই সেটাও বলতে পারছি না। কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি স্পষ্ট হবে।’

এদিকে দেরিতে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া প্রসঙ্গে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘ড্রেজারে থাকা শ্রমিকদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাল বিকেল ৫টা থেকে দফায় দফায় নৌকা নিয়ে আনতে গেছে। তারা বারবারই বলেছেন, কিছুই হবে না। সেকারণে রাত ১০টার পর যখন শেষবার ফেরাতে গিয়ে ফিরে এসেছিল তখনের পর আর যোগাযোগ হয়নি। সেকারণে কখন যে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে কেউ নিশ্চিত না। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আহ্বানে সালাম নামে এক শ্রমিক বিকেলে নিরাপদে ফিরে এসেছিল, অন্য ৮জন ড্রেজারে থেকে গেছিল। যারা থেকে গেছিল মূলত তারাই মারা গেছে বলে ধারণা করছি।’ 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১৬ নম্বর সাহেরখালি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ নম্বর বসুন্ধরা এলাকায় বেড়িবাঁধ থেকে ১০০০ ফুট দূরত্বে সাগরের মাঝে রাখা বালু উত্তোলনের ড্রেজারটি (সৈকত-২) রাখা ছিলো। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সাগরে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ঝড়ো হাওয়ায় ড্রেজারটি ডুবে যায়। এ সময় ড্রেজারে থাকা শ্রমিক শাহীন মোল্লা (৩৮), ড্রেজারচালক ইমাম মোল্লা(৩২), মাহমুদ মোল্লা (৩২), আল আমিন (২১), তারেক (৪২), আবুল বশরসহ (৪৫) আরো অজ্ঞাত দুইজন নিখোঁজ হন। সবার বাড়ি পটুয়াখালী জেলার সদর উপজেলার জৈনকাঠি ইউনিয়নের মোল্লাবাড়ি এলাকায়। 

বালু উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত ড্রেজার থেকে ফেরা শ্রমিক আব্দুস সালাম বলেন, ‘ড্রেজারে আমরা ৯ জন শ্রমিক ছিলাম। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা শুনে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ড্রেজার থেকে নেমে আমি নিরাপদ স্থানে চলে আসি। বাকিরা ড্রেজারেই অবস্থান করছিলেন।’

ড্রেজার ম্যানেজার রেজাউল করিম জানান, ঘটনাস্থলে আরো ৬টি ড্রেজার রাখা ছিল। সতর্কতা সংকেত পেয়ে অন্য সকল শ্রমিক নিরাপদ স্থানে চলে গেলেও দুর্ঘটনায় পতিত ড্রেজারের ৮ শ্রমিক আসেনি। বালু উত্তোলনকারী ওই শ্রমিকরা দিন-রাত ড্রেজারেই থাকেন। সেখানে খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমের ব্যবস্থা রয়েছে।

মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কবির হোসেন বলেছিলেন, ‘সাগরে ড্রেজার সহ ৮ শ্রমিক নিখোঁজের খবর পেয়ে একটি টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সংশ্লিষ্ট কোস্ট গার্ড কমান্ডারকে বিষয়টি মোবাইলে অবগত করেও তাদের কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। পরে ফায়ার সার্ভিসকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে কোস্টগার্ডের মিরসরাই স্টেশনের কন্টিজেন্ট কমান্ডার জহিরুল ইসলামের মোবাইলে একাধিকবার কল করেও সংযোগ স্থাপন করা যায়নি।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *