আদ্বান অর্চিশ, সীতাকুন্ড বার্তা;
স্বপ্নের পৌরসভা ২৮.৯১ বর্গ কিলোমিটারের সীতাকুণ্ড। সর্বশেষ জনসংখ্যা জরিপের (২০১১) তথ্য মতে, এর জনসংখ্যা ৬২,৩৫০ জন। ৩৫ কি.মি. দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট গিরিসৈকতের মিলন কেন্দ্র বারআউলিয়ার পূণ্যভূমিতে সীতাকুন্ড থানার অবস্থান। চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে এই পৌরসভার দূরত্ব মাত্র ৩৭ কিলোমিটার। এর উত্তরে মিরসরাই এ রয়েছে দেশের বৃহত্তর ইকোনমিক জোন। কৃষিপ্রধান এলাকা হলেও সীতাকুন্ডের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মূলত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং রেলপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এখানে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প। সঙ্গত কারণেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের স্বপ্ন সীতাকুণ্ডে বসবাস। অধিক মানুষের থাকার যোগান দিতে তৈরি হয়েছে ভাড়া বাসা। তাই দিন দিন সীতাকুণ্ড পৌর সদরের জনসংখ্যার ঘনত্ব বেড়েছে।
স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এখানে আসা মানুষগুলো অনেকেই করোনার কারণে চাকরি হারিয়েছেন, কেউ কেউ চাকরি করলেও পর্যাপ্ত বেতন পাচ্ছেন না। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন এই শ্রেণীর মানুষের আয়-রোজগারে পড়েছে ভাটা। করোনার ভয়ে মানুষ আগের মত রিকশা, টমটম ও সিএনজিতে চড়ছে না। ফলে এ খাতে প্রায় ৯০০ চালক ও মালিকের জীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। রেড জোন হওয়াতে সীতাকুণ্ডে সব ধরনের নির্মাণ কাজও এখন বন্ধ। তাই নির্মাণ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক শ্রমিক এখন বেকার। হোটেল ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ, তাই এখানে আরো প্রায় ১০০০ জন মালিক-শ্রমিক এখন পুরোপুরি বেকার। নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বপ্ন গুলো এখন ফ্যাকাসে, ঝলসানো রুটির মত। অর্থ সংকটে কোন উপায় না দেখে কেউ কেউ হচ্ছেন গ্রামমুখী, ছেড়ে যাচ্ছেন স্বপ্নের সীতাকুণ্ড পৌরসদর।
সীতাকুন্ড পৌরসভার ট্যাক্স কালেক্টর আব্দুল খালেক এর দেওয়া তথ্যমতে, সীতাকুন্ড পৌরসভায় আবাসিক ও বাণিজ্যক মিলিয়ে মোট ভবনের সংখ্যা ৭০০ টি।
প্রতিদিন কোনো না কোনো পরিবার ভাড়া বাসা ছাড়ছেন এবং তার পাশাপাশি বেশি ভাড়ার বাসা থেকে কম ভাড়ার বাসায় যাচ্ছেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। এমন ভবন খুব কম পাওয়া যাচ্ছে যেখানে “টু-লেট” ঝুলানো নেই!
নির্মল দাস ভাড়া থাকতেন মধ্যম মহাদেবপুর গ্রামের হেমলতা ভবনে। ছয় মাস আগে তিনি ভাড়া বাসায় উঠেন। টুকটাক জায়গার রেজিস্ট্রি, পাসপোর্ট ও ভিসা প্রসেসিং এর অর্থে চলে যেত তার সংসার। কিন্তু করোনার কারণেএসব কিছু স্থবির হয়ে পড়াতে ব্যয়ের সাথে তাল মিলাতে না পেরে তিনি নিজের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী চলে যান।
সীতাকুন্ড কলেজ রোড এলাকার এক বাড়ির মালিক কাঞ্চন চৌধুরী সীতাকুণ্ড বার্তাকে বলেন, আমাদের ভাড়া বাসার দুইটি পরিবার নিজ গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। অনেক বছর ধরে তারা এখানে ভাড়া ছিলেন। এক পরিবারে ছিলেন স্ত্রী আর সন্তান, আর স্বামী থাকেন বিদেশে কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশেও স্থবিরতা নেমে আসায় পরিবারে টাকা পাঠাতে পারছিলেন না। ফলে তারা মিরসরাই গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। আমার আরেক ভাড়াটিয়া পরিবারের প্রধান সংসার চালাতেন ক্ষুদ্র ব্যবসা করে। তিনিও করোনায় আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে উপায়ান্তর না দেখে গ্রামের বাড়ি বাঁশবাড়িয়াতে চলে যান।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে পৌরসদরের এক স্কুল শিক্ষক জানান, প্রাইভেট পড়ানোর জন্য আমি একটি বাসা ভাড়া নিই কলেজ রোডে। করোনার কারণে দুই মাস ভাড়া বকেয়া থাকায় বাড়ির মালিক আমাকে মুঠোফোনে বলেন, “হয় তিন দিনের মধ্যে ভাড়া দিবেন, না হয় বাসা ছেড়ে দিবেন।”
সীতাকুন্ড পৌরসভার ভোলাগিরি এলাকার এক বাড়ির মালিক আবু ইউসুফ রিপন সীতাকুন্ড বার্তাকে জানান,আমার ৯ টি ভাড়া বাসা আছে। ভাড়ায় থাকেন সবাই শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ। করোনার কারণে কাজ না থাকায় এক ভাড়াটিয়া ঘরের জিনিসপত্র রেখে কাউকে কিছু না জানিয়ে তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় চলে গেছে। তিনি সামান্য টেইলার্সের কাজ করতেন।
আরো কিছুদিন অপেক্ষা করে অবস্থার উন্নতি না হলে পৌরসদর ছেড়ে গ্রামে চলে যাবেন বলে সীতাকুন্ড বার্তাকে জানান অনেক ভাড়াটিয়া।