সনাতন ধর্মের মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি শুভ জন্মাষ্টমী আজ। হিন্দু সম্প্রদায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে জন্মাষ্টমী পালন করবেন।
দ্বাপর যুগের শেষ দিকে মহাপুণ্য তিথিতে মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে বন্দী দেবকী ও বাসুদেবের বেদনাহত ক্রোড়ে জন্ম নিয়েছিলেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।

হিন্দু পুরান মতে, ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টম তিথিতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ এবং ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল।
তাদের আরো বিশ্বাস, দুষ্টের দমন করতে এভাবেই যুগে যুগে ভগবান মানুষের মাঝে নেমে আসেন এবং সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করেন।
এ উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সরকার আজ সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলে সম্প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান।
শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
জ্যোতিষবিদদের মধ্যে এ বছর জন্মাষ্টমী তিথি নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ আজ বৃহস্পতিবার আবার কেউবা আগামীকাল শুক্রবার জন্মাষ্টমী বলে দাবি করছেন। জ্যোতিষদের কারও মতে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম অষ্টমী তিথির রাত ১২টায় হয়েছে। তাহলে এই যৌগ ১৮ আগস্টেই তৈরি হয়। আবার অন্যদের বক্তব্য হচ্ছে, জন্মাষ্টমী ১৯ আগস্ট পুরেরদিন থাকছে। এই তিথিতেই সূর্যোদয় হচ্ছে। তাই এদিনই জন্মাষ্টমী পালন করা উচিত।
ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তিথি-নক্ষত্র বিশ্লেষণ করে তৃতীয়পক্ষের বক্তব্য হচ্ছে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম রাত ১২টায় হয়েছে এবং ১৮ আগস্টেই অষ্টমী তিথি পড়েছে। তাই জন্মাষ্টমী ১৮ আগস্ট পালন করা উচিত।
শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে কেন্দ্রীয়ভাবে তিনদিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্য রয়েছে আজ রাষ্ট্রপতির সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) সকালে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ, বিকেলে ঐতিহাসিক জন্মষ্টমী শোভাযাত্রা ও রাতে তিথি অনুযায়ী কৃষ্ণ পূজা। তৃতীয় দিন ২০ আগস্ট বিকেলে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) জন্মাষ্টমী উপলক্ষে স্বামীবাগ আশ্রমে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। এছাড়া রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন, স্বামী ভোলানন্দ গিরি আশ্রম, প্রভু জগদবন্ধু মহাপ্রকাশ মঠ, রাধামাধব জিও দেব বিগ্রহ মন্দির, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, রাধা গোবিন্দ জিও ঠাকুর মন্দির, শিব মন্দির, রামসীতা মন্দির ও মাধব গৌড়ীয় মঠসহ বিভিন্ন মন্দির, পূজামন্ডপ ও ধর্মীয় সংগঠন জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে।
এদিকে চট্টগ্রামে শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে পাঁচদিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা আজ বৃহস্পতিবার ঐতিহাসিক জেএম সেন হলে শুরু হচ্ছে। উদ্বোধনী দিনে বিকাল চারটায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভাচুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ধ্যা ছ’টায় মহতী ধর্মসম্মেলনে উদ্বোধক থাকবেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলন করবেন চট্টগ্রাম রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের সম্পাদক শ্রীমৎ শক্তিনাথানন্দজী মহারাজ। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় অতিথি, বিদেশি কূটনীতিকবর্গ ও মহাত্মা মহারাজবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
শুক্রবার (১৯ আগস্ট) সকাল আটটায় বের করা হবে ঐতিহাসিক মহাশোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করবেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। প্রধান অতিথি থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ। দুপুর একটায় মাতৃসম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।
সন্ধ্যা সাতটায় ধর্মমহাসম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশী। মহান অতিথি থাকবেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। মঙ্গলপ্রদীপ প্ৰজ্বলন করবেন ঋষিধাম ও তুলসীধামের মোহন্ত শ্রীমৎ সুদর্শনানন্দ পুরী মহারাজ। উদ্বোধক থাকবেন কৈবল্যধামের মোহন্ত মহারাজ শ্রীমৎ কালীপদ ভট্টাচার্য। আশীর্বাদক থাকবেন পটিয়া পাঁচরিয়া তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ স্বামী রবিশ্বরানন্দ পরী মহারাজ।
রাত ১২টায় হবে জন্মাষ্টমী পূজা। এরপর ২০ ও ২১ আগস্ট অহোরাত্র ষোড়শপ্রহরব্যাপী মহানামযজ্ঞ। প্রতিদিন দুপুর ও রাতে রয়েছে মহাপ্রসাদ বিতরণ। ২২ আগস্ট ব্রাহ্মমুহূর্তে মহানামযজ্ঞের পূর্ণাহুতি।