সীতাকুন্ড বার্তা::
আজ ১১ই জ্যৈষ্ঠ, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। বাঙালির আবেগ, অনুভূতিতে জড়িয়ে থাকা চির বিদ্রোহী এ কবির ১২১তম জন্তজয়ন্তী আজ। নজরুজয়ন্তী উপলক্ষে রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বর্তমানে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে জাতীয়ভাবে উন্মুক্তস্থানে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন হচ্ছে না। তবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ বেশ কিছু সংগঠন ভার্চ্যুয়ালি নজরুলজয়ন্তী উদযাপন করছে। নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিটিভিসহ বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচারের জন্য ‘জাগো অমৃত পিয়াসী’ শিরোনামে ৫৫ মিনিটের একটি অনুষ্ঠান তৈরি করেছে। যা সোমবার সকাল ১১টা থেকে নিকটতম সময় প্রচারিত হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণী প্রচারিত হবে।
নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে থাকছে ‘শান্তির জয় হোক, সাম্যের জয় হোক’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর পরিকল্পনায় যা বিকেল তিনটায় একাডেমির ফেসবুক পেজে প্রচারিত হয়। ‘নব যুগ ঐ এল ঐ’ শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ছায়ানট। সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলে দেখা যাবে অনুষ্ঠানটি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২১তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। সোমবার (২৫ মে) সকাল ১১ টায় সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কবির মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাঁশরী, জাসাস এবং বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধ নিবেদন করা হয়েছে। এর আগে, জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকীতে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।
সকালে কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, ‘বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব করোনার মহামারিতে আক্রান্ত। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মন্ত্রণালয় থেকে মাত্র পাঁচজন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসেছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গভীর মমতা ও ভালোবাসা থেকে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন এবং জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আজ কবির ১২১তম জন্মবার্ষিকী, এইদিনে তাকে আমরা বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই’।
এর আগে, জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকীতে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন তারই প্রতিফলন আমরা পাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রাম ও কর্মে। বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে নজরুলকে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে আনা হয়। পরে তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অসামান্য ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুলের আজীবন সাধনা ছিল সমাজের শোষিত-নিপীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এবং মানুষের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন। তার সাহিত্যকর্মে উচ্চারিত হয়েছে পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের বাণী। নজরুলের ক্ষুরধার লেখনী যেমন ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল, তেমনি তার বাণী ও সুরের অমিয় ঝরনাধারা সিঞ্চিত করেছে বাঙালির হৃদয়কে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবির বলিষ্ঠ উচ্চারণ, ‘‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণ-তূর্য”।’
সকালে কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, ‘বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব করোনার মহামারিতে আক্রান্ত। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মন্ত্রণালয় থেকে মাত্র পাঁচজন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসেছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গভীর মমতা ও ভালোবাসা থেকে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন এবং জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আজ কবির ১২১তম জন্মবার্ষিকী, এইদিনে তাকে আমরা বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই’।
এর আগে, জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকীতে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন তারই প্রতিফলন আমরা পাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রাম ও কর্মে। বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে নজরুলকে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে আনা হয়। পরে তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অসামান্য ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুলের আজীবন সাধনা ছিল সমাজের শোষিত-নিপীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এবং মানুষের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন। তার সাহিত্যকর্মে উচ্চারিত হয়েছে পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের বাণী। নজরুলের ক্ষুরধার লেখনী যেমন ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল, তেমনি তার বাণী ও সুরের অমিয় ঝরনাধারা সিঞ্চিত করেছে বাঙালির হৃদয়কে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় কবির বলিষ্ঠ উচ্চারণ, ‘‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণ-তূর্য”।’
নজরুলকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে মানবতার জয়গান গেয়েছেন। নারীর অধিকারকে করেছেন সমুন্নত। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি যিনি ব্রিটিশ অধীনতা থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করার জন্য স্বরাজের পরিবর্তে পরিপূর্ণ স্বাধীনতার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। নজরুল জাতি-ধর্ম ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিলেন সাহসের প্রতীক। তার প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে এদেশের মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত করেছিলেন। তার সাহিত্যের বিচিত্রমুখী সৃষ্টিশীলতা আমাদের জাতীয় জীবনে এখনও প্রাসঙ্গিক। কবি নজরুলের সাহিত্য ও সঙ্গীত শোষণ, বঞ্চনা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে মুক্তির দীক্ষাস্বরূপ’।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার বিবৃতিতে বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বাঙালির চিরায়ত মনন ও চেতনার কবি। বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল পরিচিত ছিলেন প্রেম-দ্রোহ ও সাম্যের কবি হিসেবে। তার ক্ষুরধার লেখনীতে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধমন্ত্র শাণিত ছিল। “চির উন্নত মম শির” উদ্ধৃত করে কবি সারাজীবন বিদ্রোহ ও সংগ্রাম করেছেন শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে’। তিনি বলেন, ‘কুসংষ্কার, ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কবি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। ব্রিটিশ শাসকদের শোষণ, নির্যাতন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কলম ধরে তিনি বাঙালির জাতীয়তাবোধের জাগরণ ঘটিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “বাংলা বাঙালির হোক, বাংলার জয় হোক, জয় বাংলা”। সাহিত্যের কবি হতে রাজনীতির কবি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে “জয় বাংলা” হয় বিজেতা বাঙালির স্লোগা’।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক অবিসংবাদিত কিংবদন্তি। তার ক্ষুরধার লেখনীতে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে বিপ্লবের মন্ত্র উচ্চারিত হয়। বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি দেশের স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কারাগারে নির্যাতন সহ্য করতেও দ্বিধা করেননি। তার কবিতা, গানে মানবতা ও সাম্যের বাণী বিধৃত হয়েছে। তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার, সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। তাই নজরুল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এবং একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক। তিনি উপমহাদেশের স্বাধীনতার প্রথম বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর। তার কবিতা ও গান আমাদের মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আমি এই মহান কবির বিদেহী আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই’।
১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে বিদ্রোহী কবি নজরুল জন্মেছিলেন। তার ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া। তার বাবা কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মের পর দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তার ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। বাবার অকালমৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, হাজি পালোয়ানের মাজারে খাদেম, মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। তবে নিজের দুঃখ নিয়ে নয়, তিনি জাতির দুঃখ-ক্লেশ, দৈন্য-লজ্জা ঘোচানোর জন্য ভাবতেন সব সময়। কাজী নজরুল ইসলাম বিশ শতকের বিশ ও ত্রিশের দশকে উপমহাদেশের অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যর্থ অনুকরণ ও অনুসরণের কৃত্রিমতা থেকে আধুনিক বাংলা কবিতাকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল সবচেয়ে সফল।
তিনিই রবীন্দ্র-উত্তর বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার পথিকৃৎ। নজরুল তার কবিতা, গান ও উপন্যাসে পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। কোমল আর কঠিনে মেশানো এক অপূর্ব ব্যক্তিত্ব কাজী নজরুল ইসলাম। প্রেমে পূর্ণ, বেদনায় নীল। আবার প্রতিবাদে ঊর্মিমাতাল। তিনি আমাদের অনন্ত প্রেরণার উৎসও। বাংলার মানুষের সবচেয়ে কাছের, প্রাণের মানুষ তিনি। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে অসুস্থ কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বঙ্গবন্ধু কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। পরে তাকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার বিবৃতিতে বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বাঙালির চিরায়ত মনন ও চেতনার কবি। বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল পরিচিত ছিলেন প্রেম-দ্রোহ ও সাম্যের কবি হিসেবে। তার ক্ষুরধার লেখনীতে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধমন্ত্র শাণিত ছিল। “চির উন্নত মম শির” উদ্ধৃত করে কবি সারাজীবন বিদ্রোহ ও সংগ্রাম করেছেন শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে’। তিনি বলেন, ‘কুসংষ্কার, ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে কবি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। ব্রিটিশ শাসকদের শোষণ, নির্যাতন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কলম ধরে তিনি বাঙালির জাতীয়তাবোধের জাগরণ ঘটিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “বাংলা বাঙালির হোক, বাংলার জয় হোক, জয় বাংলা”। সাহিত্যের কবি হতে রাজনীতির কবি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে “জয় বাংলা” হয় বিজেতা বাঙালির স্লোগা’।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক অবিসংবাদিত কিংবদন্তি। তার ক্ষুরধার লেখনীতে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে বিপ্লবের মন্ত্র উচ্চারিত হয়। বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি দেশের স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কারাগারে নির্যাতন সহ্য করতেও দ্বিধা করেননি। তার কবিতা, গানে মানবতা ও সাম্যের বাণী বিধৃত হয়েছে। তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার, সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। তাই নজরুল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এবং একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক। তিনি উপমহাদেশের স্বাধীনতার প্রথম বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর। তার কবিতা ও গান আমাদের মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আমি এই মহান কবির বিদেহী আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই’।
১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে বিদ্রোহী কবি নজরুল জন্মেছিলেন। তার ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া। তার বাবা কাজী ফকির আহমেদ ও মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মের পর দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তার ডাকনাম ছিল দুখু মিয়া। বাবার অকালমৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, হাজি পালোয়ানের মাজারে খাদেম, মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। তবে নিজের দুঃখ নিয়ে নয়, তিনি জাতির দুঃখ-ক্লেশ, দৈন্য-লজ্জা ঘোচানোর জন্য ভাবতেন সব সময়। কাজী নজরুল ইসলাম বিশ শতকের বিশ ও ত্রিশের দশকে উপমহাদেশের অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যর্থ অনুকরণ ও অনুসরণের কৃত্রিমতা থেকে আধুনিক বাংলা কবিতাকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল সবচেয়ে সফল।
তিনিই রবীন্দ্র-উত্তর বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার পথিকৃৎ। নজরুল তার কবিতা, গান ও উপন্যাসে পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। কোমল আর কঠিনে মেশানো এক অপূর্ব ব্যক্তিত্ব কাজী নজরুল ইসলাম। প্রেমে পূর্ণ, বেদনায় নীল। আবার প্রতিবাদে ঊর্মিমাতাল। তিনি আমাদের অনন্ত প্রেরণার উৎসও। বাংলার মানুষের সবচেয়ে কাছের, প্রাণের মানুষ তিনি। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে অসুস্থ কবিকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বঙ্গবন্ধু কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। পরে তাকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সূত্র: দৈনিক চট্টগ্রাম