শারদীয় দুর্গোৎসবের আজ মহাসপ্তমী পূজা। প্রতিটি মন্দিরে মন্দিরে শনিবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মায়েদের উলুধ্বনি, শংঙ্কের ধ্বনি, ঢাকের বাজনায় মহা ষষ্ঠীর ঘট স্থাপন করেছেন পুরোহিতরা। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানাদি শুরু হয়েছে।
দিনের শুরুটা দেবী আনন্দময়ীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে। চিন্তা-উদ্বেগ দূরে সরিয়ে রেখে হিন্দু পরিবারগুলো আজ গা ভাসাবে সপ্তমীর জোয়ারে। মহালয়ার শিউলি বিছানো ভোরে শুরু হয়েছিল উৎসবের আলাপ। মহাসপ্তমীতে সেই সুর সপ্তমে পৌঁছে গেল। বলা হয়ে থাকে, ষষ্ঠী যদি পূজার প্রিমিয়ার হয়- তাহলে সপ্তমী পূজার শুরু।
শাস্ত্রমতে, পূজার শুরুটা মহা সপ্তমীতেই। তবে সে অপেক্ষায় থাকেননি ধর্মপ্রাণ সনাতনীরা। ষষ্ঠী থেকে বেজে ওঠেছে পূজার ঘণ্টা। মণ্ডপে মণ্ডপে ছড়িয়ে পড়েছে দর্শনার্থীদের ভিড়। মণ্ডপজুড়ে আলোর রোশনাই। রাতভর
শুধুই ঠাকুর দেখা।
মহাসপ্তমী সপরিবারের মা দুর্গার পিতৃগৃহে প্রবেশের দিন। দেবীর নবপত্রিকা স্নান ও প্রাণ প্রতিষ্ঠা দিয়ে দিনের মুখ্য আচার শুরু হয়েছে। এতদিন পরে বাপের বাড়ি ফিরেছে মেয়ে। সুতরাং শুচি শুদ্ধ না করে মেয়েকে কি ঘরে তোলা যায়। তা না হলে অমঙ্গল হবে যে। তাই ভোর হতেই শুরু হয়ে যায় নবপত্রিকা স্নান। একে একে হয়েছে মহাস্নান, অষ্ট কলস স্নান, আবাহন, চক্ষুদান, প্রাণ প্রতিষ্ঠা। তারপর পুরোহিতের মন্ত্রোচারণ। ঢাকের আওয়াজ।
সে অনুযায়ী, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সপ্তমী পূজার রীতি মেনে নবপত্রিকা (কলাবউ) স্নানের পর শুরু হয়েছে দুর্গার আরাধনা। এরপর ঘট বসিয়ে সঙ্কল্প। ফলনের দেবী হিসেবে মহাসপ্তমীতে দুর্গাপূজা হয়। অন্যান্য আরও ৮টি গাছের সঙ্গে বেল গাছের শাখা কেটে রাখা হয়। এই নয়টি গাছের শাখাকে স্নান করিয়ে পূজার জায়গায় নিয়ে আসা হয় এবং এর পরেই মাটির প্রতিমায় হয় প্রাণ প্রতিষ্ঠা। মন্দিরে মন্দিরে নানান আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে মহাসপ্তমীর পূজা। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সব মন্দিরগুলো সেজেছে অপরুপভাবে আলোক সজ্জায় এবং রাতে ছড়াচ্ছে আলোর ঝলছানী।
এবার সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে হবে দুর্গাপূজা। গত বছর মণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি।
চট্টগ্রাম জেলায় এবার ২০৬২ পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব হচ্ছে বলে জানা গেছে। যার মধ্যে ১৫৫৭টিতে প্রতিমা পূজা। শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ-চট্টগ্রাম জেলা শাখার নেতারা।
দেবীর এই আগমনকে ঘিরেই ব্যস্ত সময় পার করছেন দেশের প্রতিটি অঞ্চলের পূজা সংশ্লিষ্টরা। তবে গেলোবারের দুঃস্বপ্ন যেন না ফেরে সেই বার্তাই আসছে সবখান থেকে। যদিও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বলছে নাশকতার কোনো আশঙ্কা করছেন না তারা।