প্রকৃতির এক স্বর্গরাজ্য সীতাকুণ্ড

সীতাকুন্ড যেন প্রকৃতির সৌন্দর্যের অপরূপ, লীলাভূমি আমাদের সীতাকুণ্ডের,
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা নাম সীতাকুণ্ড যা ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার দ্বিতীয় স্তর আমাদের সীতাকুণ্ড । এটি চট্টগ্রাম বিভাগের অধীন চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে একটি এবং চট্টগ্রাম জেলার উত্তরে অবস্থিত। চট্টগ্রাম নগরীর ৯ কি.মি. উত্তরে রাজধানী ঢাকা থেকে ২১৯ কি.মি.দক্ষিণে – ৩৫ কি.মি. দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট গিরিসৈকতের মিলন কেন্দ্র বার আউলিয়ার পূণ্যভূমিতে সীতাকুন্ড থানার অবস্থান।দর্শনীয় স্থান এবং প্রাচীন সভ্যতা ও অপরূপ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি নিয়ে এই সীতাকুণ্ড,

সীতাকুণ্ডের সৌন্দর্য্যের স্থানগুলো হলো-

সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়,
সীতাকুণ্ড পৌরসদর থেকে এক কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত চন্দ্রনাথ পাহাড়কে কেন্দ্র করে হাজার হাজার বছর ধরে এসব উপাখ্যান ঘুরছে মানুষের মুখে মুখে। পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সীতার কুণ্ড, রাম-লক্ষণের স্মৃতি বিজড়িত স্থান। হিন্দু গ্রন্থ অনুসারে সতী দেবীর দক্ষিণ হস্ত পতিত হয়েছিল এখানে।

অাপনি এখানে বেড়াতে এলে শুধু বেড়ানোই হবে না, পাশাপাশি প্রাচীন সভ্যতা ও প্রকৃতির অপরূপ অাপনাকে ছুঁয়ে যাবে নিজের অজান্তে।

সাড়ে তিন কিলোমিটার উঁচু চন্দ্রনাথ পাহাড়ের একেবারে উপরে অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির। সেখান থেকে শুরু করে একেবারে নীচ পর্যন্ত পুরো পাহাড় জুড়ে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য মন্দির। ঠিক কতোগুলো মন্দির এখানে রয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে অাপনি বেড়ানোর সময় অাপনার চোখে উল্লেখযোগ্য যে মন্দিরগুলো চোখে পড়বে সেগুলো হলো শংকর মঠ, ব্যাসকুণ্ড পুকুর, শয়ম্ভুথাথ বাড়ি ইত্যাদি। এছাড়া প্রতি বছর মেলায় প্রায় ১০ লাখের বেশি লোকের সমাগম হয়।

সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক: সীতাকুণ্ড পৌর সদর থেকে মাত্র মাত্র দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে সমতল ভূমি ও পাহাড় জুড়ে স্থাপিত হয়েছে সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক। এখানেই প্রতিষ্ঠিত দেশের অন্যতম বোটানিক্যাল গার্ডেন সীতাকুণ্ড বোটানিক্যাল গার্ডেন। প্রচুর গাছগাছালি ও সবুজের সমারোহে পাহাড়ের বুক চিরে উঠে গেছে সরু রাস্তা। এই রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে দেখবেন চিত্রা হরিণ, খরগোসসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী। পাহাড়ের উপরে অবস্থিত সৌন্দর্য্যের অন্যতম উৎস বিশাল ঝর্ণা। যা সুপ্তধারা নামে পরিচিত। এই পাহাড়ে বসেই কবি নজরুল লিখেছিলেন, “অাকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ওই”।

দারোগাহাট সহস্রধারা: সীতাকুণ্ড পৌরসদরের দুই কিলোমিটার দক্ষিণে ও ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে দেড় কিলোমিটার পূর্বে গেলেই অাপনাকে থমকে দাঁড়াতে হবে। দেশের সবচেয়ে বড় ঝর্ণা অাপনার সামনে অবস্থিত। সমুদ্রের মতো গর্জন নয়, তবে অদ্ভুত এক মোহনীয় ঝংকার তুলে হাজার হাজার সারিতে পাহাড় থেকে নেমে অাসছে ঝর্ণার স্রোতধারা। প্রতিদিন প্রচুর নারী- পুরুষ, স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা বেড়াতে অাসে।

বাঁশবাড়ীয়া সমুদ্র সৈকত: সীতাকুণ্ড পৌরসদর থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে ও ডিটি রোড থেকে এক কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত বাঁশবাড়ীয়া সমুদ্র সৈকত। বেড়ীবাঁধ সংলগ্ন এ সৈকতে সারাবছরই ভীড় থাকে নারীপুরুষের। এ সৈকতে হাঁটার সময়ে অাপনাকে ছুঁয়ে যাবে সমুদ্রের জল। ইচ্ছে করলে প্যান্ট গুটিয়ে নেমে পড়তে পারেন পানিতে। ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট-এ ছুটে বেড়ায় হরিণ। বালুচরে ঘুরে বেড়ায় সামুদ্রিক কাঁকড়া। দর্শনার্থীদের ভীড় অাছে, কিন্তু সমুদ্রের গর্জনে তাদের কোলাহল ঢাকা পড়ে। তৈরি করে এক অপূর্ব নিস্তব্ধতা। সূর্য ডোবার সময় হাত বাড়িয়ে ছুঁতে পারবেন সূর্য।

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত: সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সবচেয়ে অালোচিত পর্যটন ক্ষেত্র গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত সীতাকুণ্ডে অবস্থিত। সীতাকুণ্ড পৌরসদর থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে সমুদ্রের কোল ঘেঁষে অবস্থিত গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, প্রচুর ঘাস, অার সমুদ্রের পানি-এই নিয়েই গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। বিশাল সবুজ চর জুড়ে অাছে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ।সবুজ ঘাসে কান পাতলে শুনতে পারবেন মাটির ভেতরে সমুদ্রের গর্জন। উপরে পাখির ডাক, নীচে সমুদ্রের গর্জন- এমন অনুভূতি দেশের অার কোথাও নেই।

এই ছাড়া সীতাকুণ্ড অর্থনীতিতে ব্যাপক ভাবে ভূমিকা রাখছে, গড়ে উঠছে শিল্প নগরী, বন্দর নগরী চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চল অন্যতম খ্যাত হলো সীতাকুণ্ড

এক কথায়, সীতাকুণ্ডে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি যা আপনাকে মনমুগ্ধকর করবে,এর একদিকে সুউচ্চ পাহাড়, অন্যদিকে সুবিশাল সমুদ্র। প্রকৃতির এমন উদারতা দেশের অার কোথাও সচরাচর চোখে পড়ে না। দীর্ঘদিন ধরে সীতাকুণ্ড হিন্দুদের তীর্থ স্থান ও কৃষিভূমির জন্য বিখ্যাত হলেও গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে পরিচিত হয়ে উঠছে পর্যটনের জন্য। এই জেলার পর্যটনক্ষেত্রগুলোতে একদিকে যেমন রয়েছে প্রাচীন সভ্যতার অনেক পুরনো নিদর্শন তেমনি রয়েছে প্রকৃতির অপূর্ব সমারোহ।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *