মাদকের গড ফাদার কারা ?

মাদকের গড ফাদার কারা?

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি

উত্তর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একের পর এক ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ধরা পড়ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। দফায় দফায় অভিযান ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে ধরা হচ্ছে। সীতাকুণ্ডে গত তিন মাসে লক্ষ লক্ষ টাকার ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু দিনশেষে নতুন ইয়াবা কারবারীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে ঠিকই। এতো গ্রেফতার আর আটক হলেও কমছে না ইয়াবার পাচার ও বেচা-কেনা। সীতাকুণ্ড উপজেলার অনেক এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা এই ইয়াবা ব্যবসা অনেকটাই নিরাপত্তা পাচ্ছে। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া আর পৃষ্ঠপোষকতার কারণে তারা থানা/জেল থেকে দ্রুতই ছাড়া পেয়ে যায়। কেউ মুখ খুলতে নারাজ; কেননা মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে নিজের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে লাঞ্ছিত হয়েছেন অনেকে। তাই কেউ ভয়ে মুখ খুলতে চান না। কেউ আবার পরিবারের কথা ভেবে চুপ থাকেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা ও সঠিক প্রয়োগ না থাকায় মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলতে কিংবা তথ্য দিতে মানুষ পিছিয়ে থাকছে, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের যুব সমাজ। আর দিনে দিনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে দেশ ও জাতি। মিয়ানমার এবং ভারতের সীমান্ত দিয়ে আসা এসব ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ নানান ধরণের মাদক সেবন করে খুন, সন্তাসী কর্মকা-, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি- সব ধরণের অনৈতিক কাজ বেড়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম নগর প্রান্তের সিটি গেইট থেকে পুরো সীতাকুণ্ড উপজেলায় মাদকের বিস্তার লাভ করেছে। দিনে কর্মজীবী রাতে ইয়াবার কারবারি- এমন ঘটনার উদারহণও নেহায়েত কম নয়। তবে এসব গোপন তথ্য ভয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিতে চায় না সাধারণ মানুষ। তথ্য প্রদান না করার অন্যতম কারণ- তথ্যদাতার পরিচয় গোপন না থাকা এবং মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তা-সদস্যদের সু-সম্পর্ক। কেউ যদি তথ্য প্রদান করে এবং তা যদি ফাঁস হয়ে যায় তাহলে তথ্য প্রদানকারীর উপর নেমে আসে ঘোর অনামিষা।
সীতাকুণ্ড পৌরসভার দক্ষিণ ইদিলপুর মহিলা মাদ্রাসা সড়কটি মাদকের আস্তানা বলে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছে। ইদিলপুর, শেখপাড়া, পন্থিছিলা, বটতলের বিভিন্ন নীরব জায়গায় মাদকের কারবার চলে সব সময়। মুখোশধারী ছদ্মবেশী কিছু চিহ্নিত সিন্ডিকেট মুখোশের আড়ালে মাদকের ব্যবসা করে গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কতিপয় কর্তারা কোনো ব্যবস্থা নেন না বিশেষ কারণে। বিভিন্ন সময় মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও অনেক সময় তা শুধুমাত্র বড় কর্তাদের দেখানোর জন্য করা হয়। অভিযানের পরপরই আবারো শুরু হয় এসব অপকর্ম। স্থানীয়রা জানিয়েছেন এসব অপরাধীরা কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইতিবাচক সংকেত না পেলে ব্যবসা চালু করে না।
খুব কৌশলে রাতের অন্ধকারে গাঁজা সেবন করতে দেখা যায় উল্লেখিত এলাকাগুলোতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, রাজনৈতিক কিছু বড় ভাই তাদের শেল্টার দেয়ার কারণে স্থানীয় উঠতি তরুণ ও যুবকেরা ইয়াবাসহ মাদকের ব্যবসা করতে আগ্রহী হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ধরলেও কোনো প্রভাবশালী নেতার সুপারিশে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত যাদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে তারা ছাড়াও কিছু পদবীধারী ব্যক্তি আছেন, যাদের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা নেই। তারাও এই অন্ধকার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানান এলাকাবাসী।
এছাড়া সীতাকুণ্ড থানার শুকলাল হাট, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা, মাদাম বিবির হা, সোনাইছড়ি, সলিমপুর, ছোট দারোগারহাট, বড় দারোগার হাট, বটতল, নুনাছড়া ইত্যাদি স্থানে মাদকের কারবার চলছে জোরেশোরে। নিরিবিলি পরিবেশ ও নির্জন জায়গায় তারা এসব মাদক কেনাবেচা করেন।
সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি ফিরোজ মোল্লা সীতাকুণ্ড থানায় আসার পর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের অনেককেই গ্রেফতার করলেও বরাবরের মতোই গডফাদাররা থাকছেন ধরাছোয়ার বাইরে। যদিও আগের ওসি দেলোয়ার হোসেন মাদক নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানান সীতাকুণ্ডবাসী। বিভিন্ন মাধ্যমে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতন কিছুটা বাড়ার ফলে মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতারের সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু আইনের ফাঁকফোঁকড় দিয়ে তারা অতি সহজেই বেরিয়ে আসছেন। এই গ্রেফতার অভিযানে আবার অনেকে নিরীহ মানুষকেও জড়িয়ে দেয়া হচ্ছে শুধুমাত্র পূর্ব শত্রুতা কিংবা টাকা আদায়ের জন্য।
সীতাকুণ্ড উপজেলার ভূঁইয়া পাড়ার সাহাব উদ্দিন বলেন, কোনো মামলা না থাকলেও মাদকের মামলায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে দুইবার।
শিশু কিশোরদের মাধ্যমে মাদকের বেচাকেনা হরদম চলছে। একশো-দুইশো টাকা তাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে তাদের মাধ্যমে ইয়াবা পাচার করে মাদক কারবারিরা। মাদকের গডফাদার কারা? এই উত্তর সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকের জানা থাকলেও কেউ প্রকাশ করেন না। আবার কিছু মাদক ব্যবসায়ী তাদের সোর্সদের মাধ্যমে অভিযানের তথ্য আগেই পেয়ে যাওয়ায় সঁটকে পড়তে সুযোগ পান।
স্থানীয়দের মতে, সরকারের নির্দেশনার অন্তত ৮০ শতাংশ পালন করলেও মাদক নির্মূল করা সম্ভব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সততার সহিত উদ্যোগী তৎপরতা থাকলে মাদক কারবারিরা কখনোই মাদকের ব্যবসা করার সাহস পাবেন না।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *