ফেব্রুয়ারি মাস ভাষার মাস

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি’… আজ থেকে শুরু হল বাঙালির গৌরবের মাস ফেব্রুয়ারি, বাঙালির জাগরণের মাস ফেব্রুয়ারি। পাকিস্তানি শাসকদের কাছ থেকে ভাষার দাবি আদায়ের লড়াইয়েই প্রথম প্রতিরোধ, জাতীয় চেতনার উন্মেষ। একুশে ফেব্রুয়ারি থেকেই রচনা শুরু স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাস।

ভাষা শহীদের সেই আত্মত্যাগের পথ ধরেই একাত্তরে স্বাধীনতা। তবে গত বারের মতো এবারও পরিবেশ বিরূপ। ফেব্রুয়ারির কথা এলেই মনে পড়ে একুশের প্রথম প্রহর থেকে কালো ব্যানার, পতাকা, ব্যাজ আর গোলাপ, গাঁদা, মল্লিকা, ডালিয়ার সুসজ্জিত স্তবক বা মালা নিয়ে প্রভাতফেরি করে পায়ে-পায়ে শহীদ মিনারের দিকে এগিয়ে যাওয়া। আর রোজ বেলা গড়ানোর পরে দল বেঁধে বাংলা একাডেমির অমর একুশের বইমেলায় যাওয়া। কিন্তু চিরচেনা এ দৃশ্যগুলো বদলে দিয়েছে করোনা মহামারি।

বরাবর ফেব্রুয়ারি প্রথম দিন থেকেই শুরু হয় অমর একুশের বইমেলা। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটে দেশে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গতবারের মতো এবারও ফেব্রুয়ারির শুরুতে বইমেলা শুরু হচ্ছে না। গত বছর মেলা শুরু হয়েছিল ১৮ মার্চ। এবারও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে ১৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে একুশে বই মেলা।

সাতচল্লিশে দেশভাগের পর, উর্দুকে রাষ্টভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে পাকিস্তান। প্রতিবাদে ফুুসে ওঠে ছাত্রসমাজ। সেদিন মিছিলে চালানো গুলিতে শহীদ হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ অনেকেই। তাদের রক্তেই রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায় বাংলা।
তাই এই ফেব্রুয়ারিতে শিল্প–সংস্কৃতি, সৃজন–মননের, উদ্‌যাপনের বহুমাত্রিক উদ্যোগ উৎসব চলতে থাকে মাসজুড়ে। বইমেলা, শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাট্যোৎসবসহ নানা আয়োজনে মাসটি একটি ভিন্ন রকমের দ্যোতনা নিয়ে আসে বাঙালির জীবনে।

এদিকে একুশের যে চেতনা, তার প্রতিফল সর্বস্তরে আজও দেখছেন না বিশিষ্টজনেরা। দিচ্ছে ভাষার শুদ্ধতা রক্ষা ও চর্চা বাড়ানোর তাগিদ। এছাড়া বাংলা ভাষার ব্যবহারেও সচেতনতার ছাপ দেখছেন না বিশিষ্টজনেরা। আদালতের রায় আজও দেয়া হচ্ছে না বাংলায়। শুধু ফেব্রুয়ারি নয়, এসেছে সারা বছরই শুদ্ধ বাংলা চর্চার তাগিদও।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *