গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত সমস্যা ও সম্ভাবনা

মোঃ জয়নাল আবেদীন সীতাকুণ্ড

প্রকৃতি প্রেমী মানুষের অতি প্রিয় একটি পর্যটন স্থান হিসেবে বিবেচিত গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। পর্যটকদের উপস্থিতি বলে দেয় দিন দিন কেমন! জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই মায়াবী সৈকত। মায়াবী সৈকত এই জন্যই বলা চলে যে , কেননা এই সমুদ্র সৈকতের মায়ার টানে পর্যটকরা বার বার এখানে ফিরে আসেন। প্রকৃতির নানা বৈচিত্র্য দেখতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে মানুষেরা ভীড় জমায়।বিশেষ করে ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী থেকে পর্যটকরা বেশি আসেন। সবুজের গালিচা , ছোট ছোট গর্ত আর সমুদ্রের কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। সন্ধ্যা হলেই হরিণের উঁকিঝুঁকি সমুদ্র সৈকতের রুপ ধারণ করে অন্য বেশে। প্রকৃতি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রুপ ধারণ করে এই সৈকতের সঙ্গে পরিচয় না হলে হয়তো বুঝবেন না।কবি, লেখক, সাংবাদিকগণ এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য নিয়ে লেখালেখি করলেও তাদের নতুন করে লিখতে বাধ্য করে এই সবুজের সমারোহ। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ বীচের সৌন্দর্যকে আরো অপরুপ সুন্দর করে তুলেছে।পাখ পাখালীর অভয়ারণ্য এই সমুদ্র সৈকত। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে আর সমুদ্রের কলতানে মুখরিত করে তোলে পুরো পরিবেশকে।

দুঃখের বিষয় হচ্ছে , গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে বর্তমানে পর্যটকদের আসা যাওয়ায় সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সিএনজি বা অটোরিকশা করে সীতাকুণ্ড নামার বাজার থেকে আসতে কোন সমস্যায় না পরলেও কিন্তু স্বস্তি নেই সাঁকো নিয়ে।গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতের যাত্রা শুরুতেই দোকানের পাশেই বিপদ জনক সাঁকো। অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পর্যটক চলাচলের একমাত্র অবলম্বন এই সাঁকো টি। নড়বড়ে এই সাঁকো পার হতে গিয়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার। যেহেতু এই সমুদ্র সৈকত বনবিভাগের আওতায় পড়েছে তাই তাদের সু দৃষ্টি এই সাঁকো সংস্কার করা গেলে পর্যটকরা উপকৃত হবেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যদি এই বিষয়ে নজর রাখেন তাহলে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা যায়।

এছাড়াও সমুদ্র সৈকতের আশেপাশে মানসম্মত কোন বাথরুম নেই। সমুদ্র সৈকতে ধনী, গরীব , উঁচু নিচু সব পর্যায়ের মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। কিন্তু মলমূত্র ত্যাগের জন্য মান সম্মত বাথরুম না থাকায় অনেকেই পড়েন বিপাকে।শুরুর দিকে বীচের পরিস্থিতি এমন ছিল যে, বাথরুমে যাওয়ার আগে দর্শনার্থীদের কয়েকবার ভাবতে হতো। কিন্তু কোন উপায় না থাকায় শেষ পর্যন্ত ভাঙ্গারু কোনরকম নির্মাণ করা বাথরুমে ঢুকতে হয়।

গাড়ি পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত সু ব্যবস্থা না থাকায় অনেক পর্যটক চিন্তিত। নিজস্ব গাড়ি নিয়ে অনেকে বের হোন সমুদ্র সৈকত এলাকায় ঘোরাফেরা করার জন্য। কিন্তু গাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বা গাড়ি সেইফ জায়গায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট পার্কিং না থাকায় হতাশ হন পর্যটকরা।

এছাড়াও গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত হতে বালি উত্তোলন করাতে এই সৈকত কে কোন কোন প্রভাবশালী মরণফাঁদ তৈরি করছেন। এভাবে বালি উত্তোলন করাতে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। গোসল করতে গিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন।এসব বালী উত্তোলন কারীদের দমন করতে না পারলে সমুদ্র সৈকতে ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাবে। কোন এক লাইভ সাক্ষাৎকারে বীচ কমিটির হাশেম সওদাগর এই সব অভিযোগ তুলে ধরেন।

উপরে বর্ণিত সমস্যাগুলো সমাধান করা গেলে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত সারাদেশে পর্যটন সফলতা ও সম্ভাবনা হিসেবে নাম উঠে আসবে। এছাড়া স্থানীয় সরকার এই পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ করলে এই শিল্পের বিকাশ অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বের ১৩ কোটি মানুষ সরাসরি এই পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *