ঈদকে পুঁজি করে আবারও ‘অসাধুর’ হাতে মুরগির বাজার

ঈদকে পুঁজি করে আবারও ‘অসাধুর’ হাতে মুরগির বাজার

রোজা শুরুর আগে কয়েক দফা বাড়ার পর এবার ঈদের আগে আরও দফা বেড়েছে মুরগির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগিতে দাম বেড়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। শুধু তাই নয়, ঈদকে ঘিরে মাছ, মাংস, চিনি, সেমাই, মসলা সবকিছুতেই বাড়তি দাম। ঈদকে কেন্দ্র করে অসাধু বিক্রেতারা দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতার। অন্যদিকে সরবরাহ সংকটের অজুহাত ব্যবসায়ীদের।

দুসপ্তাহ আগেও প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৯০ টাকায়। গতসপ্তাহে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছিল ২১০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে আজ বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) নগরের হালিশহর এলাকায় প্রতিকেজি ব্রয়লার ‍মুরগি ২৪৫ টাকা এবং খুলশী, টাইগারপাস ও পাহাড়তলীতে ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি লাল লেয়ার ৩৫০ টাকা ও সাদা লেয়ার ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে প্রতিকেজি গরু ৮শ ও খাসি ১১শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নগরের হালিশহর এলাকার মুরগি বিক্রেতা মো. জসিম সিভয়েসকে বলেন, অর্ডার দেয়ার পরও খামারিরা পর্যাপ্ত পরিমাণে মুরগির সরবরাহ দিতে পারছে না। ২শ মুরগি অর্ডার দিলে পাচ্ছি ১শ থেকে ১৫০টি। আমাদেরকে খামারিরা বলছে, অতিরিক্ত গরমে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ব্রয়লার মুরগির মারা যাচ্ছে। সবমিলিয়ে সরবরাহ কম তাই মুরগির দাম বেড়েছে। 

নগরের পাহাড়তলী বাজারে মুরগি কিনতে আসেন মো. ফারাবী। তিনি বলেন, গতসপ্তাহ মুরগি কিনতে আসলে দোকানদার ২২০ টাকা দাম চান। পরে দরদাম করে ২১০ টাকায় কিনি। আজ মুরগি কিনতে আসলাম ২৫০ টাকা চাচ্ছে। বড় জোর ৫ টাকা কমাতে পারবেন বলে জানিয়েছেন দোকানদার। এক কথায় মুরগি ব্যবসায়ীরা নিজের ইচ্ছামত দাম নিচ্ছে।

অস্থিরতা সেমাই চিনির বাজারে 

চিনির বাজারে অস্থিরতা কমাতে গত ৬ এপ্রিল পরিশোধিত চিনির মূল্য নির্ধারণ করে দেয় সরকার। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী খুচরা বাজারে পরিশোধিত খোলা চিনি ১০৪ টাকা এবং পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজি ১০৯ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। অথচ নগরের খুলশী, হালিশহর, নাসিরাবাদ, পাহাড়তলীসহ বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন খুচরা দোকানগুলোতে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।

এদিকে ঈদের আগে বাড়তে শুরু করেছে সেমাইয়ের দাম। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২শ গ্রাম লাচ্ছা সেমাই ৫ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলা লাচ্ছা প্রতিকেজি ১৮০ থেকে ২২০ এবং খোলা চিকন লম্বা সেমাই মান অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। 

কিসমিস, বাদাম ও তরল দুধেও নেই স্বস্তি

ঈদে সেমাইয়ের সঙ্গে কিশমিশ, বাদাম ও তরল দুধের চহিদা বাড়ে। এ চাহিদাকে পুঁজি করে পণ্যগুলোর দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। বাজারে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি কিসমিস ৪৮০ থেকে ৫শ, কাজুবাদাম মানভেদে ৮শ থেকে ১১শ, চিনাবাদাম ২শ ও কাঠ বাদাম ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত তরল দুধ ৯০ থেকে ১শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

বেড়েছে মশলার ঝাঁজ

ঈদের সময় মসলার চাহিদাও বেড়ে যায়। তাই বাড়তি দামের তালিকায় বাদ পড়েনি পণ্যটিও। প্রতিকেজি এলাচে ৩শ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৫শ, কেজিতে ৬০ টাকা বেড়ে দারুচিনি ৪৪০, কেজিতে ১শ টাকা বেড়ে শুকনা মরিচ ৪শ ও জিরা ৭শ, কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ধনিয়া ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া প্রতিকেজি কালোজিরা ৩শ, জয়ত্রী ৩ হাজার ৬শ, জয়ফল ১ হাজার ১শ, লবঙ্গ ১ হাজার ৬শ, গোল মরিচ ও তেজপাতা ৯০ এবং সরিষা ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

এদিকে সপ্তাহে ব্যবধানে কেজিতে ৬ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ৩৬ থেকে ৪০, কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে দেশি রসুন ১শ ও চায়না রসুন ১৪০ টাকা, কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে দেশি আদা ২৪০ এবং কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে মিয়ানমারের আদা ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

৬০ টাকার নিচে মিলছে না সবজি

সপ্তাহের ব্যবধান সবধরনের সবজিতে ১০ থেক ১৫ টাকা বেড়েছে। বাজারে অধিকাংশ সবজি ৬০ টাকা বা তার চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজার প্রতিকেজি ঢেঁড়স ৭০, লাউ ও মিষ্টি কুমড়া ৪০, বেগুন ও চাল কুমড়া ৭০, বরবটি মানভেদে ৮০ থেকে ১শ, কাকরোল ১শ, চিচিঙ্গা ৬০, পটল ৬০ থেকে ৭০, কচুর লতি ৬০, ধুন্দুল ৭০ থেকে ৮০, টমেটো ৪০, ঝিঙ্গা ৭০, কাঁচা আম ৭০ ও ক্যাপসিক্যাম ২৫০ দরে বিক্রি হচ্ছে।

তাছাড়া প্রতি আঁটি মাইরারশাক ২৫, পুঁইশাক ২০, পাটশাক ১০, লালশাক ২০, কলমি শাক ১০, পালংশাক ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তীব্র গরমের কারণে চাহিদা বেড়েছে লেবুর। তীব্র গরমের কারণে চাহিদা বেড়েছে লেবুর। তীব্র গরমের কারণে চাহিদা বেড়েছে লেবুর। বর্তমানে প্রতি হালি এলাচি লেবু ৪০ থেকে ৬০ ও কাগজি লেবু ৭০ তেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

নগরের পাহাড়তলী বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. এনাম সিভয়েসকে বলেন, তীব্র গরমে সবজি বেশি নষ্ট হচ্ছে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় দামটা বেড়েছে। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যাবে। 

এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে সবধরনের মাছের কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টটাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্র  তিকেজি তেলাপিয়া ১৬০, পাঙ্গাস ২২০, পাবদা ৪শ, কই ২৬০ থেকে ২৮০, শিং ৪৫০, চিংড়ি আকারভেদে ৬শ থেকে ৭শ, কাতলা ৩শ, রুই ২৬০, রূপচাঁদা ৯শ, কালিবাউস ৪শ ও কোরাল ৬শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

তাছাড়া বাজারে প্রতিকেজি খোলা আটা ৬০, প্যাকেট আটা ৬৫, দেশি মসুরের ডাল কেজিপ্রতি ১৩০ টাকা। ইন্ডিয়ান মসুরের ডালের কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১২৫ টাকা, ছোলা মানভেদে ৮০ থেকে ৯০, মুগ ডাল ১১৫, বেসন ৭৫, চিড়া ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ক্যাব ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার যা বলছে

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন সিভয়েসকে বলেন, ব্যবসায়ীরা রোজা শুরু হবার আগে একবার দাম বাড়ানোর পায়তারা করে। আরেকবার ঈদের আগে। এক কথায় অজুহাত পেলেই হলো। কাজেই প্রশাসন বা ভোক্তা অধিকারকে এখন আগের চেয়ে আরো বেশি কঠার হতে হবে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুর রহমান বলেন, বাজার দর স্বাভাবিক রাখতে আমরা প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করছি। আমরা ক্রয় আর বিক্রয়মূল্য যাচাই করছি। সব বাজারেই আমরা অনিয়ম পেয়েছি বা পাচ্ছি। অনিয়ম পেলেই জরিমানা করছি। আমাদের লোকবল কম, তবুও আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি। কোথাও বাড়তি দামে পণ্য বিক্রি হলে আমাদের কাছে অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নেব।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *