ইপসা- আমার ব্যক্তিগত কিছু কথা।

কলাম লেখক

সাইফুর রহমান শাকিল

একজন ব্যক্তির মানসিক দৈন্যতার ফলে যে সংকট সৃষ্টি হয় তার দায় কখনো একটি প্রতিষ্ঠানের উপর বর্তায় না। হতে পারে সে ব্যক্তি সেই প্রতিষ্ঠানের একজন। হোক সে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। কেননা, আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিটি মানুষের একটি ব্যক্তিগত জীবন ভাবনা আছে, আছে তার একান্ত অনুভূতি।
একজন মানুষ কর্মময় জীবনে কর্মবিন্যাসের চকে বাঁধা থাকলেও অফিসিয়াল সময়ের বাহিরে বাকী জীবন ব্যবস্থা প্রতিটি মানুষ তার নিজস্ব নিয়ম দিয়ে পরিচালিত করে। সে জীবনে অনেক অসংগতি, অসচ্ছতা, অনিয়ম থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কখনো কখনো মানুষ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে অনিয়মের কাছে। যদিও তা কখনো সমর্থনযোগ্য নয়। তবুও মানুষ তো!
“মানুষ মাত্রই ভুল করে”- এই অধিকারে সব অপরাধ ক্ষমার যোগ্য সে দাবীও যৌক্তিক নয়। তাই বলে সে মানুষটির চারিত্রিক পতন হলে, সে মানুষটির দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার দায় যেমন প্রতিষ্ঠানের উপর পড়ে না, আবার প্রতিষ্ঠান যখন সে মানুষটির বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না, তখন সে প্রতিষ্ঠান দায় এড়াতে পারে না।
ইপসা সীতাকুণ্ডের মাটি থেকে জন্ম নেওয়া একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি কর্মীর শ্রম, মেধা ও মননের উপর ভর করে ইপসা আজ বাংলাদেশের মানচিত্র ছাড়িয়ে ছুঁয়েছে আন্তর্জাতিক সীমানা। কয়েক হাজার মানুষ এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। পরোক্ষভাবে সুবিধাভোগীর সীমানায় প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের আনাগোনা।
সে ইপসা আজ একজন মানুষের ব্যক্তিগত মানসিক দৈন্যতার ফলে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বারবার। ঘটনার সত্যতা আদালতে বিচারাধীন, তাই ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। তবে প্রাথমিক ভাবে ঘটনার সত্য মিথ্যা যাই হোক তা কোন ভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়। বরং তীব্র ঘৃণা ও নিন্দনীয়।
আমি যতটুকু জেনেছি ঘটনাটি গত বছরের জুলাইয়ের দিকে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। সে ঘটনা দৃষ্টিগোচর হওয়ার সাথে সাথেই ইপসা সে ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ও সকল ধরণের সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
আজ হঠাৎ করে বছরখানেক পর সে ঘটনাটিকে পুঁজি করে একটি পক্ষ ইপসাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে সে সময়ের ঘটনাটি। কেন কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়া সে ঘটনাটি আবার সামনে নিয়ে আসা হলো সেটি এখন আমার ব্যক্তিগত জিজ্ঞাসা। বিষয়টি যেহেতু আদালতে বিচারাধীন ও কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মানুষটির সাথে ইপসার কোন সম্পর্ক এখন দৃশ্যমান নয়, তাহলে কেন সে ঘটনাটি আবার টেনে আনা হলো সামনে, তা রহস্যময় ঠেকছে আমার কাছে।
ঘটে যাওয়া ঘটনাটি সে সময়ে যত না সংবাদ মাধ্যমে ছাপা হয়েছিল, তা কেন এক বছর পর আবার কারণ ছাড়া ইপসাকে জড়িয়ে বারবার গণমাধ্যমে ছাপা হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। উদ্দেশ্য কী তাদের , সে প্রশ্ন তোলা অস্বাভাবিক নয়।
আমার ব্যক্তিগত মত হলো, এই বিষয়টি নিয়ে ইপসা কর্তৃপক্ষকে তাদের অবস্থান আরো সুস্পষ্ট করা উচিত। তা না হলে ইপসার শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াবে। এবং নানা প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাবে। বিষয়টি যেহেতু গণমাধ্যমে এসে গেছে তাই ইপসা কর্তৃপক্ষের উচিত গণমাধ্যমের ভাষায় বিষয়টি তুলে ধরা।
আনীত অভিযোগের আলোকে ইপসার বক্তব্য সুস্পষ্ট করা এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ইপসার প্রাতিষ্ঠানিক কী ভূমিকা নিয়েছে তা তুলে ধরা। সেটি না হলে ইপসা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হবে ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আমার দৃষ্টিতে ইপসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানে অর্ধ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে সামাজিক, মানবিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রা।
শুভ কামনা ইপসার জন্য।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *