সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সফটওয়্যার ‘হ্যাক’ করে ১৬৭টি জন্মনিবন্ধন

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড
এর আগে নগরের ছয়টি ওয়ার্ডের আইডি ব্যবহার করে সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে ৬৮০টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সফটওয়্যার ‘হ্যাক’ করে ১৬৭টি জন্মনিবন্ধন করা হয়েছে অভিযোগে সীতাকুণ্ড থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। গত বুধবার সীতাকুণ্ড থানায় জিডি করেন ইউপি চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন আজিজ। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছেন তিনি। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় গতকাল রোববার।

এর আগে চলতি বছরের ৮ থেকে ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উত্তর পতেঙ্গা, আন্দরকিল্লা, উত্তর পাহাড়তলী, দক্ষিণ কাট্টলী, দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর ও লালখান বাজার ওয়ার্ডের আইডি ব্যবহার করে সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে ৬৮০টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়।

সলিমপুর ইউপির চেয়ারম্যান রেজিস্ট্রার জেনারেলকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, উপজেলার সলিমপুর ইউপিতে জন্মনিবন্ধন সফটওয়্যারে গত ১৫ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৮ দিনে ৩৭১টি নিবন্ধন হয়। এর মধ্যে সলিমপুর ইউপি থেকে ২০৪টি ও বাইরে থেকে ১৬৭টি নিবন্ধন করা হয়। ইউপির বাইরে থেকে করা ১৬৭টি নিবন্ধন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে করা হয়েছে। এসব নিবন্ধনের জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন নথি ওই ইউপিতে সংরক্ষিত নেই। অনুসন্ধান করে জানা গেছে, হ্যাকাররা ওই জন্মনিবন্ধনগুলো করে নিয়ে থাকতে পারে। যাচাই-বাছাই করে ওই সব

নিবন্ধন বাতিলের অনুরোধ করেন চেয়ারম্যান।

ইউপি চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন আজিজ বলেন, জানুয়ারির শেষের দিকে ১৮ দিন নিবন্ধন সার্ভার কাজ করছিল না। মাঝেমধ্যে সার্ভার কাজ করলেও তা ছিল ধীরগতির। এটি কী কারণে হয়েছে, জানা যায়নি। অনেক সময় ইন্টারনেটের সমস্যার কারণেও ওই সার্ভারে কাজে বিলম্ব হয়। কিন্তু এ রকম ১৬৭টি নিবন্ধন কীভাবে করেছে, তা বলা যাচ্ছে না। হ্যাকাররা পরিকল্পিতভাবে এ কাজ করতে পারে বলে জানান তিনি। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

ইউএনও মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ইউপির সফটওয়্যারে আবেদন অনুমোদন না করলে জন্মনিবন্ধন পাওয়ার সুযোগ নেই। হ্যাকাররা কিংবা প্রতারক চক্রও এ কাজ করতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে ১৬৭টি জন্মনিবন্ধন হ্যাকিং বা অন্য কোনো উপায়ে করার বিষয়টি উঠে এলে সেগুলো বাতিল করা হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম নগরে জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতির ঘটনায় এ পর্যন্ত হওয়া ছয়টি মামলাই তদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। নির্বাচন কমিশন (ইসি) বরখাস্ত অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীনসহ এসব মামলায় তারা মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ৮ থেকে ২১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উত্তর পতেঙ্গা, আন্দরকিল্লা, উত্তর পাহাড়তলী, দক্ষিণ কাট্টলী ও দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের আইডি ব্যবহার করে সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে ৫৪৭টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়। সর্বশেষ ২৪ জানুয়ারি নগরের লালখান বাজার ওয়ার্ডে ১৩৩টি জন্মসনদ অবৈধভাবে ইস্যু হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। এর আগে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি উত্তর পতেঙ্গা, চকবাজার ও দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করে ১৮টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়। এর মধ্যে ১২টি ছিল রোহিঙ্গাদের নামে।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *