সঠিক হিসাব পাওয়া না গেলেও আনুমানিক ৩০০ বছর আগে প্রথম শুরু হয় সীতাকুণ্ডের ঐতিহ্যবাহী ‘শিব চতুর্দশী মেলা’। সীতাকুণ্ড পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দিরকে ঘিরে যাত্রা শুরু হওয়া এই মেলা হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে। চলবে ২মার্চ পর্যন্ত। ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশ থেকে দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেছে। চলছে মেলায় ষ্টলের তৈরির কাজ। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে চন্দ্রনাথ মন্দির পর্যন্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এছাড়াও নিরাপত্তাসহ মেলার যাবতীয় প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলাশ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘মেলার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটা মন্দিরে নারী পুরুষের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকায় এবারের মেলায় ২০লাখের অধিক দর্শনার্থীর আগমন ঘটবে বলে আমরা আশা করছি।’
মন্দিরের পুরোহিত, পূজা উদযাপন কমিটি, মেলা কমিটি ও সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখানে শিব চতুর্দশী মেলা শুরু নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। কার সময়কালে প্রথম মেলার যাত্রা শুরু হয় তা নিয়েও রয়েছে একাধিক মতভেদ। তবে প্রথম যে সময়কালে কিংবা যাদের উদ্যোগে শুরু হোক না কেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এ তীর্থকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। আর এ কারণে মেলা বা পূজার উপলক্ষ ছাড়াও এখানে অবস্থিত তীর্থস্থান সমূহ দেখতে সারাবছর দর্শনার্থীরা ভিড় করে। ফাল্গুন মাসের চতুর্দশী তিথিকে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হয় শিব চতুর্দশী মেলার। মেলায় দেশ বিদেশের ব্যবসায়ীরা নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে। পরিধেয় বস্ত্র, বাচ্চাদের খেলনা, হস্ত শিল্প, প্রসাধনী সামগ্রী, নিত্য প্রয়োজনীয় সাংসারিক জিনিসপত্র, শোপিস, নানান রকম খাবারের দোকান এবং ভাতের হোটেল ছাড়াও আরও বিভিন্ন পণ্যের দোকান বসে। আগত দর্শনার্থীদের জন্য থাকে সার্কাসসহ আরও অন্যান্য চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা।
মেলার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম তিনদিনে শেষ হলেও অনানুষ্ঠানিক ভাবে মেলা চলতে থাকে দোল পূর্ণিমা পর্যন্ত। আনুষ্ঠানিক তিনদিনের পরবর্তী ১৪ দিনকে স্থানীয়রা ভাঙ্গা মেলা হিসাবে অভিহিত করে থাকে। এ সময় সব ধর্মের মানুষের এক মিলন মেলায় পরিণত হয় সীতাকুণ্ড। ভাঙ্গা মেলায় হিন্দুর চেয়েও মুসলিমসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষের আধিক্য চোখে পড়ে।
সুষ্ঠ ভাবে মেলার কার্যক্রম সম্পাদনের লক্ষ্যে প্রতিবার চট্রগ্রাম জেলা প্রশাসককে সভাপতি এবং সীতাকুণ্ড উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে কার্য নির্বাহী কমিটির সভাপতি করে মেলা কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সার্বিক তত্বাবধানে নিরাপত্তা সহ মেলার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এবারও একইভাবে গঠন করা হয়েছে মেলা কমিটি।
কমিটিতে পলাশ চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এবার নিরাপত্তার দায়িত্বে সীতাকুণ্ড-সন্দীপ সার্কেলের এএসপি আশরাফুল করিম এবং সীতাকুণ্ড থানার ওসি আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ও আনসার ভিডিপির মহিলা সদস্য নিয়োজিত থাকবে।
কার্য নির্বাহী কমিটির সভাপতি ইউএনও শাহাদাত হোসেন বলেন,‘মেলা কেন্দ্রিক সকল প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করেছি। তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব রকমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।