সীতাকুণ্ডে মাদ্রাসার ‘লুটেপুটে’ খাওয়ার অভিযোগ সুপারের বিরুদ্ধে

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মো. শহীদুল্লাহ নামে এক মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। তিনি সীতাকুণ্ডের পন্থিছিলা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার। প্রতিষ্ঠানটির এডহক কমিটির সাবেক আহ্বায়ক ও দাতা সদস্য ইউসুফ শাহ নামে এক ব্যক্তি এসব অভিযোগ এনেছেন। তার বিরুদ্ধে আনা এসবের অভিযোগ লিখিত আকারে জমা দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে।

অভিযোগ তিনি বলেছেন, , ২০২১ সালের জুলাই মাসে স্থানীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলম মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির ১ নম্বর দাতা সদস্য ইউসুফ শাহকে দায়িত্ব দেন। এর দুই মাস পর একই বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথম বৈঠকে সুপার মো. শহীদুল্লাহর কাছে মাদ্রাসার আয়-ব্যয়ের হিসাব চাইলে দিতে পারেন নি। তখন সঠিক হিসাব উপস্থাপন করতে সুপারকে ১ সপ্তাহ সময় বেধে দেন তিনি। কিন্তু হিসাব না দিয়ে ওই সময়ের মধ্যে কালক্ষেপণ করতে থাকেন মাদ্রাসা সুপার। পরবর্তীতে ছলচাতুরি ও কৌশলের মাধ্যমে অনেকটা জোর খাটিয়ে সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে তৎকালীন কাউন্সিলর মো. জসিম উদ্দিনকে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে আনেন অভিযুক্তা মাদ্রাসা সুপার।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ২০০১ সালে পন্থিছিলা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায় সুপার পদে যোগদান করেন মো. শহীদুল্লাহ । ২০০৫ সালে মাদ্রাসার চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের কাজীর দায়িত্বে যোগদান করেন। সে সময় কাজীর দায়িত্ব পালন করা কালীন মাদ্রাসায় দায়িত্ব পালন না করলেও তৎকালীন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিকে ‘ম্যানেজ’করে সুপারের পদে নিয়োগ আটকে রাখেন তিনি। তিন বছর কাজীর দায়িত্ব পালন করার পর আবার মাদ্রাসার সুপারের পদে যোগ দেন তিনি। যোগ দিয়েই চাকরি না করেও বিগত তিন বছরের সরকারি বেতন-ভাতার ১১ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করে নেন তিনি। এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্যের দেয়া মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজে অনুদানের ১০ লাখ টাকার বেশিরভাগ তিনি আত্মসাৎ করেন। এছাড়া নুরানী শিক্ষা সম্পূর্ণ আলাদা প্রতিষ্ঠান হলেও এই প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আয় তিনি অন্যায়ভাবে কুক্ষিগত করতেন। একই সময় মাদ্রাসার একটি ভবন ও নিজের বাসভবন তৈরি করেন সুপার শহিদুল্লাহ। নিজের বাড়ি তৈরির যাবতীয় খরচ তিনি মাদ্রাসা ভবনের খরচের সাথে যুক্ত করে দিতেন। বিভিন্ন দাতাদের কাছ থেকে যেসব সহযোগিতা আসত তার অর্ধেক মাদ্রাসার কাজে আর বাকি অর্ধেক নিজের ঘরের কাজে লাগাতেন।

আরও অভিযোগ আছে, মাদ্রাসার নামে দানবাক্সে ও মানুষের অনুদানের অর্থ বেশিরভাগ বিনা হিসাবে তিনি নিয়ে যেতেন। ৩/৪ হাজার টাকা উত্তোলন করে খরচের হিসাবে ৩/৪শত টাকা লিখতেন। এছাড়া পন্থিছিলা থেকে সীতাকুণ্ড সদরের যাতায়াতের গাড়ি ভাড়া ছিল ১০টাকা। অথচ সুপার শহিদুল্লাহ প্রতিবার যাওয়া আসার খরচ দেখাতেন ৫০০টাকা করে। 

ইউসুফ শাহ দাবি করেন মাদ্রাসা সুপারের দুর্নীতির সব তথ্য লিখিত আকারে দেওয়া সম্ভব হয়নি। প্রকৃত তদন্ত করলে তার আরো অনেক দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, শিল্পপতি মরহুম নাসির উদ্দিন এতিমখানার ছাত্রদের জন্য প্রতিমাসে খাদ্য সামগ্রী পাঠাতেন। কিন্তু সুপার শহিদুল্লা ও অপর একজন শিক্ষক এসবের বেশিরভাগ আত্মসাত করতেন। মাজারের উছিলায় এতিমদের জন্য অনেকে ছাগল, মুরগি দান করেন। এতিমদের না দিয়ে এগুলা সব সুপার নিজের জন্য নিয়ে যান।

তবে নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাদ্রাসা সুপার মো. শহীদুল্লাহ। তিনি বলেন,সব কিছু নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। মাদ্রাসার কোন তহবিল আমি তসরুপ করিনি। তবে কাজীর দায়িত্ব পালন করাকালীন ৬ মাসের সরকারি বেতনের টাকা উত্তোলন করার কথা তিনি স্বীকার করেছেন। ‘চাকরি থেকে অব্যাহতি নিলেও সুপার পদে তিন বছর কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি কেন?’—এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে তদন্তের ত্যতা নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করে আমরা যা পেয়েছি সেই অনুযায়ী প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *