এম কে মনির
সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়িতে পাহাড়ের পাদদেশে নির্মাণ করা হচ্ছে ১০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক একটি সরকারি হাসপাতাল।যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা। নতুন এ হাসপাতালের জন্য ভূমি দান করেছেন সীতাকুণ্ডের বিশিষ্ট শিল্পপতি মাস্টার আবুল কাসেম।দানকৃত ভূমির পরিমাণ ৫১ শতাংশ যার বর্তমান মূল্য ৩ কোটিরও বেশি। সবুজে ঘেরা এই জমির উপর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে নির্মিত হচ্ছে দুইটি বহুতল ভবন। গত ডিসেম্বর মাস থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসপাতাল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। চলতি মাসে প্রথম তলার ছাদ দেওয়া হবে। আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারিতে বানু মুনাফ মা ও শিশু সেবা কেন্দ্র নামের এই হাসপাতালটির সুফল পেতে শুরু করবে আশেপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের জনগণ। উল্লেখ্য ২০১৭ সালের জুন মাসে অজ্ঞাত রোগে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ত্রিপুরা পাড়ার ১১ জন শিশুর মৃত্যু হয়।আক্রান্ত হন আরও শতাধিক শিশু।
পরবর্তীতে অজ্ঞাত রোগটি ‘হাম’ বলে নিশ্চিত হন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। ওই সময় ত্রিপুরা পল্লীর বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য সেবা না নেওয়ার বিষয়টি ওঠে আসে। পাহাড়ে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিরা আধুনিক স্বাস্থ্য সেবা না নিয়ে ঝাঁড়ফুক ও কবিরাজি চিকিৎসার প্রতি ঝুঁকে পড়ার ইতিহাস সুস্পষ্ট ছিল। শিশু মৃত্যুর ঘটনার পর সরকারিভাবে ত্রিপুরা পল্লীর পাশে ওই সময় অস্থায়ীভাবে স্থাপিত হয় কমিউনিটি ক্লিনিক। পাহাড়ের নৃ-গোষ্ঠিসহ স্থানীয় বাসিন্দারা চিকিৎসা নিতে শুরু করে ওই ক্লিনিকে। প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের। তবে সেবা প্রার্থীরা বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এরই মধ্যে সরকারি ভাবে মন্ত্রনালয়ে সিদ্ধান্ত হয় ওই এলাকায় যদি কেহ জমি দান করেন তা হলে ১০ শয্যার একটি হাসপাতাল করবে সরকার। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির আহমেদ জমি সন্ধান করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন।
অনেক দানশীল ও ব্যবসায়ীর কাছে ধর্ণা দিয়েও কোন কাজে হয়নি। পরবর্তীতে চেয়ারম্যানের অনুরোধে জমি দান করতে এগিয়ে আসেন শিল্পপতি মাস্টার মোহাম্মদ আবুল কাসেম। তিনি সরকারি নিয়ম মোতাবেক ৫১শতক জমি রেজিষ্ট্রারি করে দেন হাসপাতালের জন্য। রেজিষ্ট্রারি খরচও বহন করেন তিনি। সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির আহমেদ বলেন, সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। কিন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বে পাহাড়ে বসবাস করে প্রায় ৪ শতাধিক নৃ-গোষ্ঠি পরিবার। তারা আধুনিক চিকিৎসা সেবা কী জানতো না। টিকার সাথেও পরিচয় ছিলো না তাদের। ফলে ২০১৭ সালের জুনে ‘হাম’ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ত্রিপুরা পল্লীর ১১ শিশু। সরকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে একটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র করার উদ্যোগ নেন। এতে পাহাড়ে বসবাসরত নৃ-গোষ্ঠিসহ স্থানীয় গর্ভবতী মা, কিশোর কিশোরীসহ শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হবে। থাকবে টিকা কার্যক্রমও।
জমিদাতা বিশিষ্ট শিল্পপতি মাদার স্টিল শিপ ব্রেকার্সের মালিক মাস্টার মোহাম্মদ আবুল কাসেম বলেন, সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বে কোন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র নেই। পাহাড়ে থাকা নৃ-গোষ্ঠিসহ স্থানীয় গবীর অসহায় পরিবারের নারী শিশুরা অর্থ অভাবে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমার বাবা আলহাজ্ব আবদুল মোনাফ অনেক সময় বিষয়টি অনুধাবন করে আমাকে বলতো ওই এলাকার গবীর অসহায় লোকদের জন্য একটি হাসপাতাল করতে। স্থানীয় চেয়ারম্যান মনির আহমেদ হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি আমাকে জানালে আমি ৫১ শতক জায়গা হাসপাতালের জন্য দান করি।
চট্টগ্রামের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ডি ডি ডাক্তার ও খ্যে ইউন ববি বলেন, এই হাসপাতালে আধুনিক সব সেবা দেওয়া হবে। দুইজন ডাক্তার ও ১৫জন সেবক থাকবেন। থাকবে অ্যাম্বুলেন্স সুবিধাও। গর্ভবতী মা, প্রসব পরবর্তী সেবা, কিশোর কিশোরীদের সেবাসহ সকল টিকা এখান থেকে দেওয়া হবে। সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় বলেন, ত্রিপুরাপল্লীর লোকজন ছাড়াও সেখানকার মানুষেরা চিকিৎসা সেবা নিতে পারবে ওই হাসপাতাল থেকে।হাসপাতালটি সেবার নতুন দ্বার উন্মোচন করবে বলে মনে করেন তিনি। হাসপাতালটির কাজ বাস্তবায়ন দেখে খুশি এলাকার জনগণও।এতোদিন তাদের ২০ কিলোমিটার দূরের সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে হতো।এখন সেই ভোগান্তির অবসান হবে বলে আশাবাদী সোনাইছড়ি এলাকার মানুষ।