সীতাকুণ্ডের উপকূলে আটকা এতিমখানার জাহাজ গিলে খাচ্ছে প্রভাবশালীরা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সাগর উপকূলে দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে আটকে থাকা একটি জাহাজ কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। স্থানীয় এক ইউপি সদস্যকে সামনে রেখে বড় বড় রাঘব বোয়ালের এক সিন্ডিকেট কাজটি করছে বলে জানা গেছে। জাহাজটি তারা ক্রয়ের কথা বললেও স্থানীয়দের দাবি তাদের কাছে ক্রয়ের বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। তাছাড়া যে ইয়ার্ডের সীমানায় জাহাজটি কাটা হচ্ছে সেই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও নবায়ন না থাকায়, কিভাবে জাহাজ কাটা হচ্ছে, আর এতে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার কে নেবে তা নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা শঙ্কা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ‘রয়েল বাড’ নামের এই জাহাজটি রাজধানী ঢাকার কোন এক এতিমখানার নামে দান করেছিলেন এক শিল্পপতি। ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পথে সাগরের মাঝখানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়ায় ক্যাপ্টেন তখন জাহাজটিকে সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারীর সাগর উপকূলে নোঙ্গর করে রাখেন। দীর্ঘদিন ধরে জাহাজটি সেখানেই পড়ে ছিল। পরবর্তীতে ভাটিয়ারী শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড নামের একটি জাহাজ ভাঙার কারখানা চালু হলে জাহাজটি তাদের ইয়ার্ডের সীমানার মধ্যে পড়ে যায়। কিন্তু ২৯ বছর ধরে জাহাজটি একই স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকলেও কিছুদিন ধরে সেটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।

ভাটিয়ারী শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের মালিক মো. নায়িম শাহ বলেন, শুনেছি স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যানরাসহ কয়েকজন জাহাজটি কাটছে। শুনেছি তারা মালিকের কাছ থেকে জাহাজটি কিনে নিয়েছে। তবে তার প্রতিষ্ঠানের সীমানার মধ্যে কাজটি হলেও জাহাজ কাটতে গিয়ে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার তিনি নেবেন না বলে জানান। তার ইয়ার্ডের লাইসেন্স নবায়ন নাই স্বীকার করে তিনি বলেন, জাহাজ আমদানি করার আগে আমরা লাইসেন্স নবায়ন করে নিব।

সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একদল শ্রমিক জাহাজ কাটার কাজে ব্যস্ত। জানতে চাইলে অহিদ মেম্বারের নেতৃত্বে তারা কাজ করছেন বলে জানায়। খবরের সত্যতা নিশ্চিতে অহিদ মেম্বারের ডিপোতে (জাহাজের মালামাল রাখার স্থান) গেলে সেখানে গিয়াস উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি জাহাজটি ক্রয় করেছেন। তবে ক্রয় সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখাতে বললে তা তিনি দেখাতে পারেননি। এসময় অহিদ মেম্বার নিজ প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।

ভাটিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন বলেন, গিয়াস উদ্দিন ও মাহবুব নামের দুই ব্যক্তি জাহাজটি ক্রয় করেছে বলে আমাকে জানিয়েছে। তারা যদি জাহাজ ক্রয় করে থাকে তাহলে বৈধ কাগজপত্র ও ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধ করে কাটার জন্য আমি বলেছি। জাহাজটির বেশিরভাগ অংশ ইতিমধ্যে চুরি হয়ে গেছে বলেও তিনি জানান।

এদিকে জাহাজটি অনেক পুরাতন হওয়ায় এটার বিষয়ে কোন তথ্য নেই বলে জানান বিএসবিআরএ (বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এন্ড রিসাইক্লার্স এসোসিয়েশন) সভাপতি মো. আবু তাহের।

তবে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ভাটিয়ারী শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের সীমানায় জাহাজ কাটলে দুর্ঘটনার দায়ভারও তাদেরকে নিতে হবে। লাইসেন্স নবায়ন না থাকলে জাহাজ কাটা যাবে না জানিয়ে খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনিও জানান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top