সীতাকুণ্ডের করোনা যোদ্ধা

সীতাকুণ্ডে এরা কারা?

না না শিরনাম দেখে ভয় পাবার কিছু নেই। এরাই সীতাকুণ্ডের এক একজন প্রতিচ্ছবি। যদিও আপনাদের দৃষ্টিতে ভিন্ন হতে পারে। কারণ আমার দৃষ্টিটা কিছুটা ক্ষীণ। তারপরও ইন্টারনেটের এই ধূম্রজালে কিছু কিছু চরিত্র মঞ্চের মত আবিষ্ট হয়। আমি তাদের কথা বলছি। যেমন ধরুন,

এই যুবকটা। নাম তার নাহিদ, সীতাকুণ্ড সরকারী আদর্শ বিদ্যালয়ের মাঠে ক্রিকেট ব্যাট হাতে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধিয়ে দিত ক্রিকেটীয় ভাসায় কি বলে জানিনা তবে বল টা নিয়ে দুরন্তপনায় এক সের। হাতে রং তুলির আচে ফুটিয়ে তুলে অদ্ভুত সুন্দর সব ছবি,ক্র্যফ্ট। ছেলেটি একজন শিল্পী।যখন ব্যাট হাতে তখন তুখার খেলুড়ে, রাজপথে দুরন্ত আর তুলি হাতে শিল্পী এই ছেলেটি যখন এই মহামারীতে মধ্যরাতে এক দল জোনাক নিয়ে দাড়ায় কবরে। মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে নেমে পরে অন্ধকারে দাফন করে এক একটি ভাইরাস আক্রান্ত মৃত দেহ। ঘরে তার শিল্পী বাবা, স্নেহময়ী মা, ভাই , স্ত্রী , আদরের সন্তান। না না সে পারতো আপনার আমার মত রাত জেগে জি বাংলা কিংবা ফেসবুকিং করতে। সন্তানের সাতে খুন শুটি। না না সেটা সে করেনি করতে পারেনি। জানেন নাহিদ নামের অর্থ
কি? অর্থটি হল শুকতারা।

অন্যদিকে দেখুন না এই যে এই ছেলেটা সীতাকুণ্ড সরকারী আদর্শ বিদ্যালয়ের নাম করা গোল কিপার , বল আসছে ওদিক থেকে এদিকে। একবার ডানে আর একবার বামে দেয়াল হয়ে দাড়িয়ে আছে , আজ স্কুলের মান সম্মান। না গোলটা হতে দেয়নি। বরং যে লং শর্ট দিয়েছে তা দিয়ে স্ট্রাইকার ঠিকিই গোল দিলো প্রতিপক্ষ শিবিরে। দশ জন ফুটবলার কাঁধে নিয়ে উল্লাস, ছুটে আসল মাঠের চার দিকে দাঁড়িয়ে থাকা দর্শ ক। সবাই সমন্বিত চিৎকার নান্টু নান্টু নান্টু। হুম নান্টু পালের কথা বলছি। আপনাদের নান্টু পাল। রাত বিড়েতে প্রচণ্ড যন্ত্রণায় শরীর যখন কেঁপে উঠে খবর দেবেন নান্টুকে তার কাছে ওষুধ আছে, একটা হাসপাতাল আছে,সার্বক্ষণিক যার সেবা প্রতিদিন নিচ্ছেন। না সে হুট করে এখানে সে আসেনি, পরিশ্রম আর মেধায় সে তরুণ সফল ব্যবসায়ী । অন্যান্য কাপুরুষের মত এ আকালে ঘরে সে বসে থাকতে পারত তাহলে সে পেত সচ্ছলতার পরম শান্তি , সন্তানের স্নেহ আর নাক ডেকে চরম শান্তির ঘুম। নানা সে এটা করেনি, আমাবস্যার রাতে ঘুট ঘুটে নিকষ অন্ধকারে শ্মশানে শুন শান নীরবতায় এ ছেলেটি আগুনে দাহ করছে হয়ত কোন চেনা অচেনা করোনা-ক্রান্ত মৃতদেহ।

সে সময় অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে যে রকম সফলভাবে বই পড়া আন্দোলনকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন সেই আলোক ছটায় সীতাকুণ্ড ছেলেদের স্কুলটিতেও ছোঁয়া লেগেছে। অনেক গুলো দেশি বিদেশী বই পড়তে হবে এবং নির্দিষ্ট মাস পর পরীক্ষা দিতে হবে । আমরা চিন্তায় পরে গেলাম স্কুলের, মান সম্মান! ছেলেটি বলল ধুর ব্যাটা কোন ব্যাপার হইল, চল শুরু করি।
হুম শুরু হল আমাদের বই পড়া। অতঃপর বই পড়া প্রতিযোগিতায় থানা পর্যায়ে মাসুম সামজাদ প্রথম হল। আমার বন্ধু। পড়া শোনা , খেলা ধুলা আর স্কাউটের প্রথম সারির ক্যাডেট যোগ্যতা বলেই আজ ইংল্যান্ডে সীতাকুণ্ডের ঝাণ্ডা উদ্যত করেছে । সময়ের পালাবদলে ছেলেটি এখন সীতাকুণ্ডের মায়া নিয়ে বিশ্বের নক্ষত্র লন্ডনের আইটি বিশেষজ্ঞ, সফল প্রযুক্তি ব্যবসায়ী। এ মহামারীতে সে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সীতাকুণ্ডের করোনা যুদ্ধে। ব্রিটেনের আবহাওয়ায় ওম কাঁথায় শুয়ে হাতে ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে পা এর উপর পা তুলে বিবিসি দেখে হাই তুলতে পারত সে। না সে সেটা করেনি। প্রযুক্তি আর নিজের অদম্য দেশ প্রেমে নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করছে সীতাকুণ্ডের মানুষের কষ্ট নিজের কাঁধে নিতে , আর তাই সারাদিনের পরিশ্রমের পর প্রতি মুহূর্তে নির্ঘুম রাত কাটায় চোখ রাখে ভার্চুয়ালে সীতাকুণ্ডে। একজন মানুষ হাজার মাইল দুরে থেকেও সমাজের জন্য সব করতে পারে এই যুবকটি বড় উদাহরণ। হুম আবারও বলছি ছেলেটি আমার বন্ধু আপনাদের বন্ধু মাসুম সামজাদ। জানেন মাসুম নামের অর্থ কি? মাসুম নামের অর্থ, উদ্বায়ী, সক্রিয়, উদার, উপযুক্ত, মনোযোগী।

আমার ভার্চুয়াল চোখে দেখা সীতাকুণ্ডের করোনা যুদ্ধের দামাল যোদ্ধাদের গল্প এখনও শেষ হয়নি, চলবে…..

বন্ধু তুহিন
শিক্ষক
সিটি ইউনির্ভাসিটি, ঢাকা.
থিয়েটার কর্মী, ইউটিউবার.


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *