প্রথম আলোর সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি কৃষ্ণ চন্দ্র দাসের ভাই সূর্য চন্দ্র দাসের ব্লাড গ্রুপ নির্ণয়ের ডিভাইস বাজারজাতকরণের পথে:

সীতাকুন্ড বার্তা; 

সীতাকুণ্ডের ছোটকুমিরা সুলতানা মন্দির এলাকার বাসিন্দা প্রথম আলোর সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি কৃষ্ণ চন্দ্র দাসের ভাই  চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সূর্য চন্দ্র দাস (২৪)  রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের এক খুদে যন্ত্র উদ্ভাবন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন ২০১৮ সালে। মাত্র ৪৫০ গ্রাম ওজনের যন্ত্রটি দিয়ে এরই মধ্যে সফলভাবে অন্তত অনেক মানুষের রক্তের গ্রুপ নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে।

প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৪তম ব্যাচের ছাত্র সূর্য চন্দ্র দাসের এক বছরের কিছু বেশি সময় লেগেছে এ উদ্ভাবনে। সূর্য দাস সুলতানা মন্দির মসজিদ্দা গ্রামের মৃত মৃণাল চন্দ্র দাসের ছেলে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে চতুর্থ তিনি। তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা জানায়, পড়াশোনার পাশাপাশি ২০১২ সালে স্বেচ্চায় রক্তদানের মতো মহৎ উদ্যোগ নিয়ে সিটিজি ব্লাড ব্যাংক নামক অনলাইন গ্রুপ করে অনেকের রক্ত সংগ্রহ করে অনেক রোগীকে  বিতরণ করেছেন । মূলত নিজে রক্তদান করতে গিয়ে সূর্য উপলব্ধি করেন যে একজন মুমূর্ষু রোগীও শুধু রক্তের গ্রুপ নির্ণয় সংক্রান্ত জটিলতার কারণে দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় রক্ত পায় না। তাই অনেক রোগীর প্রাণহানিও হয়। বিষয়টি তাঁকে চিন্তায় ফেলে। ফলে তিনি দ্রুততম সময়ে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের জন্য গবেষণা শুরু করেন এবং শেষ পর্যন্ত সফল হন।

সূর্য দাসের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উন্নত বিশ্বে রক্তের ছবি তুলে তা কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে গ্রুপ নির্ণয় করা হয়। এ পদ্ধতি ব্যয়বহুল। আমাদের দেশে কাঁচের ওপর রক্তের ফোঁটা ফেলে যেভাবে গ্রুপ নির্ণয় করা হয়, তাতে বেশ কিছুক্ষণ সময় যেমন লাগে, তেমনি ভুলও হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ পদ্ধতি কিছুতেই যুগোপযোগী নয়। তাই কম খরচ ও দ্রুততম সময়ে গ্রুপ নির্ণয়ের বিষয়টি মাথায় রেখে আমি গবেষণা শুরু করি।’ তিনি জানান, এ কাজে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শাহেদ আহমেদ চৌধুরী। আর প্রেরণা জুগিয়েছেন প্রিমিয়ারের শিক্ষক প্রজেক্ট সুপারভাইজর সরিৎ ধর ও প্রভাষক সাইফুদ্দিন মুন্না। এরই মধ্যে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে একটি বেসরকারি ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্পেইনে দেড় শ জনেরও বেশি মানুষের রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে তাঁর ডিভাইসে। ২৫০ টির মধ্যে সব কটি গ্রুপিং একেবারে নির্ভুলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রভাষক সাইফুদ্দিন মুন্না বলেন, ‘এ প্রজেক্টের ব্যাপারে আমি সূর্যকে গাইডলাইন দিয়েছি।’ তিনি বলেন, রক্তের সঙ্গে অ্যান্টি এ, অ্যান্টি বি ও অ্যান্টি ডি কেমিক্যাল মিশিয়ে আইআর সেন্সরের অ্যানালগ ডাটার সাহায্যে ব্লাড গ্রুপের যে কৌশল সূর্য বের করেছেন, তা বিস্ময়কর। এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য বিশ্বখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন ও ট্রিপল ই বিভাগের প্রধান টুটুন চন্দ্র মল্লিকের অনুপ্রেরণায় এ কাজ করা হয়েছে।

প্রজেক্ট সুপারভাইজর শিক্ষক সরিৎ ধর বলেন, যন্ত্রটি ছোট। কেউ যদি মনে করে, নিজ ঘরে রেখে নিজেরাই রক্ত পরীক্ষা করবে, তা-ও সম্ভব। এর আগে ম্যানুয়েল যে পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষা করা হতো, তাতে ভুল হওয়ারও আশঙ্কা ছিল। কিন্তু এই ডিভাইসে নির্ভুলভাবেই রক্তের গ্রুপ নির্ণয় হবে।

সীতাকুন্ড বার্তার  সাথে আলাপকালে সূর্য চন্দ্র দাস বলেন, পরিকল্পনা ছিলো ২০২০ এর  জানুয়ারি মাসে এর বাজারজাতকরণের। যদি করোনা  পরিস্থিতির সৃষ্টি না হতো তবে জানুয়ারি মাসেই এটি বাজারে নিয়ে আসতে পারতাম। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে খুব শীঘ্রই ‘ব্লাড গ্রুপ ডিটেকটিং ডিভাইস’ টি বাজারে আসবে।

 


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *