করোনায় কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে অক্সিজেনের স্বল্পতা

মোঃ জয়নাল আবেদীন সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি

বিশ্বের ১১৩ টি দেশ ও অঞ্চলে মহামারী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ছোঁয়াচে রোগ হওয়ার কারণে এটি ছড়িয়ে পড়ছে খুব দ্রুত।আর একারণে বিশ্বে এক নতুন চ্যালেঞ্জ কভিড-১৯।হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না। যদিও ইতিমধ্যে কিছু দেশ করোনাকে হার মানিয়েছে। সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলাই হচ্ছে করোনা জয়ের মূল কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকে। কিন্তু বাংলাদেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুর দিকে তেমন বিস্তৃতি না ঘটলেও বর্তমানে আক্রান্তের দিক দিয়ে এখন চিনকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। ভাইরাসের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে একের পর সরকারী /বেসরকারি প্রাইভেট হাসপাতাল গুলো।এমন কয়েকটি জ্বলন্ত উদাহরণ ও রয়েছে । তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য এমন একটি ঘটনা ঘটেছে ম্যাক্স হাসপাতালের বিশেষজ্ঞের সঙ্গে ।এ.এস এম লুৎফুল কবির শিমুল ম্যাক্স হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। কিন্তু যখন ওই চিকিৎসক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন তখন তার নিজের কর্মস্থল মূহুর্তে ভয়ংকর রুপ ধারণ করেছে। ম্যাক্স হাসপাতালের এমডি লিয়াকত আলী যখন শুনলেন লুৎফুল কবির শিমুল করোনা পজিটিভ। নিজের হাসপাতালে নিরলস শ্রম দেয়া লুৎফুর কবির শিমুল কে ভর্তি নেননি এবং একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও দিলেন না। পরবর্তীতে ওই মেডিসিন বিশেষজ্ঞের জন্য বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার জন্য বাসায় অক্সিজেন পাঠান।

এছাড়াও অভিযোগ উঠে এসেছে যে, অক্সিজেনের স্বল্পতায় সীতাকুন্ডের আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার শাহ আলম মারা যান।জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার শ্বাস কষ্ট নিয়ে তিনি ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি হন। শনিবার তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে।আইসিইউ বেড না পেয়ে তাকে তাকে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বিকালে নগরীর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।শাহ আলম ভাইপো শোভন অভিযোগ করে বলেন, বিকাল থেকে আমার চাচার শ্বাস কষ্ট বেড়ে যাওয়ার পর ডাক্তারদের অনেক অনুরোধ করেছি অক্সিজেন দেয়ার জন্য। সেখানে একটি অক্সিজেন বোতল নিয়ে অন্তত ৭/৮ জন টানাটানি করেন। শেষমেশ রাত ১১ টায় অক্সিজেনের অভাবে আমার চাচার মৃত্যু হয়। শোভন বলেন, জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর সেখানে চরম অবহেলার স্বীকার হয় তারা। অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে মারা গেছেন এমন অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে চট্রগ্রামে।

করোনা যুদ্ধে জয়ের মুলমন্ত্র অক্সিজেন।এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যে জিনিসটা তা হলো অক্সিজেন। বাতাসের ক্ষুদ্র এক অদৃশ্য কণা মাত্র ২১ % যার হিস্যা। কিন্তু এটাই জিবনের মূল চালিকাশক্তি।
রক্তে অক্সিজেনের স্বাভাবিক শতকরা হার (যা সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে ৯৬_১০০% ) কমে গেলে বাইরে থেকে অক্সিজেনের সাপ্লাই দেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

পৃথিবী জুড়ে সোমবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮,৯১,২১৩ জন এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন ৩,৯৯,৭০৫ জন। মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া সবার এবং সুস্থ হয়ে উঠা বেশিরভাগ মানুষেরই বিভীষিকা ছিল অক্সিজেনের স্বল্পতা। সময়মতো একটু অক্সিজেন সরবরাহ করা গেলেই হয়তো অনেকেই বেঁচে যেতেন।

করোনা সংক্রমণে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যায় চট্রগ্রাম জেলা ও অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।আর চট্রগ্রামের উপশহর সীতাকুণ্ড ও রয়েছে চরম বিপাকে।এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ছাড়াও করোনা হানা দিয়েছে সীতাকুণ্ড মডেল থানায়।গত মাসে চট্রগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউতে মারা যান এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদুল আলম (৬২)। আইসিইউ সংকটের কারণে সেদিন ছোট ভাইয়ের আইসিইউ সাপোর্ট খুলে বড় ভাইকে দেয়া হলেও বাঁচানো যায়নি তাকে। এভাবে গত একমাসে অক্সিজেনের অভাবে চট্রগ্রামে অর্ধশতাধিক মানুষ মারা গেছেন।

বাংলাদেশ তথা চট্রগ্রামবাসীর জন্য অক্সিজেন স্বল্পতা কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও ইতিমধ্যে দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ও নেতৃবৃন্দ অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রদান করেছেন। তবুও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অনেকেই এই অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে মারা যাওয়াতে কিছু মানুষ বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যান।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিজেই বাজার থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে এনে স্বাস্থ্যকর্মীর তত্ত্বাবধান ছাড়া সে অক্সিজেন ব্যবহারে নানা ঝুঁকির দিক রয়েছে। যেগুলো মানুষের জানা প্রয়োজন।

লন্ডনে করোনা ভাইরাস রোগীদের চিকিৎসা করছেন ডাক্তার আব্দুল্লাহ জাকারিয়া। বিবিসি বাংলাকে ডাক্তার জাকারিয়া বলেন, বাসায় বসে অক্সিজেন নেয়ার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ।

(১) ডাক্তার রোগীকে দেখার পর নির্ধারণ করবেন যে ঠিক কতটুকু পরিমাণ অক্সিজেন তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন।
(২) অক্সিজেন বাড়িতে রাখার জন্য রোগীর এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ডাক্তার জাকারিয়া বলেন, কেউ যদি নিজে বাজার থেকে অক্সিজেন কিনে ব্যবহার করতে শুরু করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে বিপত্তি ঘটতে পারে যদি জানা না থাকে ঠিক কতটুকু অক্সিজেন আপনি নিবেন।কারণ বেশী অক্সিজেন নিলে তা শরীরে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
দ্বিতীয়ত অক্সিজেন সিলিন্ডার যদি এমন জায়গায় রাখা হয় যেখানে আগুনের স্ফুলিঙ্গ এসে পড়তে পারে সেটা গুরুত্বর অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে।কারণ সিলিন্ডারের বিশুদ্ধ অক্সিজেন দ্বাহ্য একটা পদার্থ।কাজেই সিলিন্ডার খুবই নিরাপদে মজুত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রচন্ড ভাবে ছোবল মেরেছে আমাদের দেশে। অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে মারা যাচ্ছে অনেকেই।যদি এভাবে চলতে থাকে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে প্রাণ হারাবে অনেক মানুষ।তাই এই মুহূর্তে সাধারণ মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার একটি চিকিৎসা সেটি যেনো তারা ভালোভাবে পান সেই দাবি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *