দেশে বর্জ্যপানিতে করোনার উপস্থিতি

সীতাকুণ্ড বার্তা;

দেশে বর্জ্যপানিতে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বর্জ্যপানি পরীক্ষা করে করোনার উপস্থিতি পেয়েছেন।

দেশে প্রথম এ ধরনের গবেষণা হলো বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও করোনা নিয়ে গঠিত সরকারি জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কোনো এলাকায় কোভিড-১৯ পজিটিভ আছে কি না, তা নির্ণয় করতে এ ধরনের পরিবেশগত পরীক্ষা খুব দরকার। এভাবে বর্জ্যে যদি করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়, তবে ভবিষ্যৎ ঝুঁকি কমানোর উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হয়।

বর্জ্যপানিতে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয়ে গবেষক দল ১০ জুলাই থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১৬ বার পানির নমুনা পরীক্ষা করেছে। নোয়াখালীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামের কোভিড-১৯ আইসোলেন সেন্টারের নর্দমা, পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা ও শৌচাগারের সঞ্চালন লাইন থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ এ গবেষণার নেতৃত্ব দেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৬ বার পানির নমুনা সংগ্রহ করেছি। প্রতিবারই সংগৃহীত নমুনায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছি।’

এ ক্ষেত্রে মানুষের শরীরের করোনা পরীক্ষার প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন গবেষকেরা। ফিরোজ আহমেদ বলেন, সংগৃহীত পানি একটি সেন্ট্রিফিউজার মেশিনের (যন্ত্রচালিত ছাঁকনি) সাহায্যে ছেঁকে নেওয়া হয়। তখন ময়লা নিচে চলে যায়। ওপরের পানি আলাদা করা হয়। ওই প্রক্রিয়ায় পানি আবার ছাঁকলে ভাইরাসগুলো সব নিচে চলে যায়। আরটিপিসিআর পদ্ধতি ব্যবহার করে ওই তলানি থেকে করোনা শনাক্ত করেছেন গবেষকেরা।

‘১৬ বার পানির নমুনা সংগ্রহ করেছি। প্রতিবারই সংগৃহীত নমুনায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছি।’
ফিরোজ আহমেদ , নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ৯ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, উপসর্গহীন বহু মানুষ রাজধানীসহ সারা দেশে আছে।

কোনো একটি এলাকায় উপসর্গহীন মানুষের উপস্থিতি নির্ণয় করতে বর্জ্যপানির পরীক্ষা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেন

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন। এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, ‘কোনো এলাকায় স্বাভাবিক পরীক্ষায় করোনা নির্ণয় সম্ভব না হলে বর্জ্যপানির পরীক্ষা কোনো এলাকার করোনার উপস্থিতির প্রমাণ দিতে পারে। নোয়াখালীকে আমরা বৃহৎ সংক্রমিত এলাকা হিসেবে বিবেচনা করি। সেটি এই পরীক্ষার মাধ্যমে আবার প্রমাণিত হলো।’

বর্জ্যপানিতে করোনার উপস্থিতি নিয়ে গবেষণা হয়েছে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্সে। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ব্লগে গত বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক এলাকার বর্জ্যপানিতে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ওয়াফা এল সদর এ প্রসঙ্গে বলেন, বর্জ্যপানির পরীক্ষা খুব সহজ, কিন্তু মানসম্পন্ন। এর মাধ্যমে কোভিড-১৯ আদৌ কোনো জনগোষ্ঠীর মধ্যে আছে কি না, এর আগাম বার্তা পাওয়া যাবে। পরীক্ষার ফলাফল থেকে ব্যবস্থা নেওয়াও সহজ হবে।

নোয়াখালীয় শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামের আশপাশের বর্জ্যপানি নিয়ে গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকারিয়া। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এযাবৎ বর্জ্যপানিতে করোনার উপস্থিতি নিয়ে যেসব সমীক্ষা হয়েছে, তার সবই হয়েছে শহরের বিভিন্ন এলাকার পয়োনিষ্কাশনের জায়গা থেকে পানি সংগ্রহ করে। নোয়াখালীর গবেষণা হয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে কোভিড-১৯ রোগীদের আইসোলেশন সেন্টারের কাছে। সেদিক থেকে গবেষণাটি সুনির্দিষ্ট।

সূত্র: প্রথমআলো।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *