ছোট শহরের বড় নক্ষত্রের হারিয়ে যাওয়া

ডা. সমিরুল ইসলামের সাথে শেষ যেদিন দেখা হয়েছিল সেদিন দেশের অর্থনীতি নিয়ে প্রায় ত্রিশ মিনিট কথা হয়েছিল। উনি বিরলতম চিকিৎসকদের একজন যিনি এ যুগেও পাঁচশত টাকা সম্মানীর বিনিময়ে সেবা দিতেন। নিজ এলাকার লোকজনকে দিয়ে গেছেন সম্মানী ছাড়াই সেবা। পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতির পাশাপাশি রাষ্ট্র একজন বড় মাপের মানবিক চিকিৎসককে হারালো। উনার এক ছাত্র বলছিলেন এমন মানবিক মানুষ সবসময় পৃথিবীতে আসে না।

প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন ছিলেন আঞ্চলিক নেতা। জনশ্রুতি আছে আঞ্চলিক নেতা হিসেবে থাকতে চেয়েছিলেন বলে মন্ত্রীত্বের অফার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। ডা. এহসানুল করিমও উনার মতো চট্টগ্রামের মানুষের সেবা দিয়ে যাবেন বলে দেশের প্রথম সারির একটি বেসরকারি হাসপাতালের ঈর্ষণীয় অংকের বেতনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন চট্টগ্রামের মানুষের করের টাকায় ডাক্তার হয়েছি, তাই চট্টগ্রামের মানুষের সেবা করে যেতে চাই। ডা. মঈনুদ্দিনও ছোট শহরের বড় নক্ষত্র। বন্ধের দিনে নিজ এলাকায় রোগীদের সেবা দিয়ে গেছেন।

এনারা বোধ হয় স্কুল জীবনে ‘মাই এইম ইন লাইফ’ রচনায় সত্যিকারের ডাক্তার হওয়ার, মানবিক ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন। সেই যে এইম ঠিক করেছিলেন, মৃত্যুর আগ অব্দি সেবা দিয়ে গেলেন।

মাশরাফি, সাকিব, তামিম এরা ছোট দেশের বড় তারকা। ডা. সমিরুল, ডা. এহসানুল করিম, ডা. মঈনুদ্দিন এরা ছোট শহরের বড় নক্ষত্র। করোনা আপনাদের ফুসফুস এফোঁড়ওফোঁড় করে দিয়েছিল। আর আপনাদের চলে যাওয়া পরিচিত-অপরিচিত অনেকের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়ে গেলো।

মহামারীর জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলো না। এমন কি বিশ্বের উন্নত দেশসমূহও! করোনা অনেক কিছু নিয়ে যাচ্ছে, একই সাথে অনেক কিছুর সম্ভাবনাও তৈরি করেছে। স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানোর এটাই উৎকৃষ্ট সময়। চিকিৎসার মতো অন্যতম মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা রাষ্ট্রকেই দিতে হয় এবং সেজন্য যা যা করণীয় তা করার এটাই সে সুসময়।

সেই সুদিনের প্রত্যাশায় যেদিন এসব ছোট শহরের মানুষদের চিকিৎসা সেবা নিতে আর বড় শহরে যেতে হবে না, এমন কি দেশের বাইরেও যেতে হবে না। রাষ্ট্রপতির নিয়মিত হেলথ চেক-আপ হবে দেশের ভেতরেই। স্কুল কলেজের প্রথম বেঞ্চের এ ছাত্রছাত্রীদের জন্য হবে সেপারেট পে-স্ট্রাকচার। অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় নিশ্চিন্তে পরম মমতায় সেবা দিয়ে যাবেন আপামর জনসাধারণের।

ছোট শহরের বড় নক্ষত্ররা হয়তো কালের গর্ভে হারিয়ে গেলেন। কিন্তু যাদের মধ্যে আলো ছড়িয়ে দিয়ে গেলেন তারাই হয়তো এনাদের স্থান দখল করে নেবেন।

কলাম লিখক
মনিরুল হায়দার পিনু
যুগ্ন পরিচালক বাংলাদেশ ব্যাংক
২৫.০৬.২০২০
কোতোয়ালি, চট্টগ্রাম।