নিভে গেলো এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, ফাহিম সালেহ

সীতাকুন্ড বার্তা ;

স্বল্পভাষী, হাস্যোজ্জ্বল, বন্ধুবৎসল ফাহিমের মৃত্যু সংবাদে গোটা প্রবাসী মহল স্তম্ভিত। এই অল্প বয়সেই প্রায় ৫০ কোটি ডলার সম্পদের মালিক হলেও তার কোন অহমিকা ছিল না। নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশিদের এ হত্যাকাণ্ড বিমর্ষ করে দিয়েছে। নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশি তরুণদের কাছে ফাহিম সালেহ রোল মডেল হয়ে উঠেছিলেন।

৩৩ বছর বয়সী ফাহিম চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের হরিসপুরের সন্তান আইবিএমের সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সালেহ আহমেদের ছেলে। ১৯৮৬ সালে তার জন্ম। ফাহিমের ২০১৬ সালের ব্লগ প্রোফাইলে উল্লেখ আছে, তার জন্ম সৌদি আরবে। বাবা-মায়ের সঙ্গে আমেরিকায় এসে তারা বসতি করেন নিউ ইয়র্কের রচেস্টারে।
তার বন্ধুদের মতে, ফাহিম তরুণ বয়সেই কোডিংয়ের মাধ্যমে অ্যাপস বানানো শুরু করেন। তার স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনা ওয়ালথামের বেন্টলি ইউনিভার্সিটিতে। ওই সময়েই প্র্যাঙ্কডায়াল অ্যাপ তৈরি করে তিনি ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন।

নাইজেরিয়া আর কলম্বিয়ায়ও এমন আরও দুটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ কোম্পানির মালিক তিনি। ২০১৮ সালে নাইজেরিয়ায় মোটর সাইকেল রাইড শেয়ারিং ব্যবসার শুরু। গোকাদা তার রাইড শেয়ার অ্যাপের নাম। ২০১৯ সালে এখান থেকে ফাহিম ৫.৩ মিলিয়ন ডলারের পুঁজি সংগ্রহ করে, ওয়েব সাইট টেককাঞ্চ জানাচ্ছে এ তথ্য। নাইজেরিয়ার লাগোসসহ অন্যান্য আফ্রিকান শহরগুলোয় রাইড শেয়ারিং ব্যাপক জনপ্রিয়। এর আগে টেককাঞ্চের কাছে ফাহিম জানিয়েছে, গোকাদার মাধ্যমে লাগোসসহ আফ্রিকায় অন্য শহরেও তার ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। গোদাকাদার মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন তিনি।
তিনি আরও জানিয়েছিলেন, ‘আমরা গোকাদা ক্লাব স্থাপন করব প্রতিটা শহরে, সেখানে রেস্টুরেন্ট থাকবে, যাতে চালকরা বিশ্রাম নিতে পারে এবং একই সঙ্গে গোকাদা শপ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে আমার। ওখান থেকে ড্রাইভাররা তাদের প্রয়োজনীয় সব দ্রব্য সামগ্রী কিনতে পারবে, চাল, শাকসবজি এবং অন্যান্য বাজার-সদাই।’

ঢাকায় পাঠাও রাইড শেয়ারিং-এর একজন কর্মকর্তা ওসমান সালেহ বলেন, ফাহিম সালেহ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তারা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে জানতে পেরেছেন।

“আমরা এই ঘটনায় শকড। বিষয়টা কিভাবে ঘটেছে সে সম্পর্কে আমরা এখনো বিস্তারিত কিছু জানিনা,” বলছিলেন ওসমান সালেহ।

তিনি জানান, বাংলাদেশে অ্যাপ-ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পাঠাও প্রতিষ্ঠার পরে থেকে ফাহিম সালেহ চেয়েছিলেন আফ্রিকা মহাদেশে ব্যবসা বিস্তার করতে।

এর অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে নাইজেরিয়াতে ‘গোকাডা’ নামে একটি রাইড শেয়ারিং সার্ভিস চালু করেন। তার সাথে সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আরো একজন ছিলেন।
কিন্তু প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যেই সংকটে পড়েন তারা। কারণ নাইজেরিয়ার সরকার মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং নিষিদ্ধ করে।

‘টেককাবাল’ নামে নাইজেরিয়ার একটি প্রযুক্তি বিষয়ক গণমাধ্যম রিপোর্ট করেছে যে, সংকটে পরার আগে এক বছরেই ‘গোকাডা’ ৫৩ লাখ ডলার আয় করে।

যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ হয়ে গেলে ‘গোকাডা’ পার্সেল ডেলিভারি সার্ভিস চালু করে। বর্তমানে নাইজেরিয়ার রাজধানী লেগোসে তাদের ১০০০ মোটরসাইকেল রয়েছে।

ফাহিম সালেহ নিউইয়র্কে বসবাস করতেন। ২০১৪ সালে তিনি ঢাকায় এসে প্রযুক্তি-ভিত্তিক কিছু ব্যবসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেগুলো ব্যর্থ হয়। এরমধ্যে ‘পাঠাও’ উদ্যোগ সফল হয়েছিল। শুরুতে পণ্য পরিবহন সার্ভিস থাকলেও পরবর্তীতে রাইড শেয়ারিং সেবাও চালু করে পাঠাও।

পাঠাও প্রতিষ্ঠার সাথে ফাহিম সালেহ’র সাথে আরো দু’জন ছিলেন।

পরবর্তীতে ফাহিম সালেহ তার কিছু শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে নিউইয়র্কে ফিরে আসেন।

এরপর তিনি ‘পাঠাও’ এর আদলে অন্য দেশে ব্যবসার চিন্তা করেন।

ফাহিম সালেহের মৃত্যুর খবরে শোক প্রকাশ করেছেন তারই সহকর্মী পাঠাওয়ের সিইও হোসেন ইলিয়াস। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘ফাহিম বিশ্বাস করতো প্রযুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের জীবন মান বদলানো সম্ভব। আমাদের মধ্যে সম্ভাবনা দেখেছিল সে।’


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *